লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাটে ইয়াকুব আলী নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার দুই যুগ ধরে ভোগদখল ও চাষাবাদ করে আসা সরকারি বন্দোবস্তকৃত জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে নুরুজ্জামান নামে এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে । ওই বীর মুক্তিযোদ্ধা লালমনিরহাট পৌরসভার তালুক খুটামারা এলাকার বাসিন্দা। এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকারি খাস জমি ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের পুণর্বাসন কর্মসুচির আওতায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করেন। এরই আলোকে ভূমি পুণর্বাসন কমিটি কর্তৃক অনুমোদন ক্রমে ১৯৯৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এসএ দাগনং ৪৩১৬, খতিয়ান নং ১, জে এল নং ১১, বি আর এস দাগ নং ৬৪২৭, এর ৩৯৫ শতাংশ জমির মধ্যে ৫৯ শতাংশ জমি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইয়াকুব আলী ও তার স্ত্রী মোছাঃ হালিমা খাতুনের নামে বন্দোবস্ত দেয়া হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের ৯মার্চ ইউনিয়ন তহশিলদারের প্রতিবেদনের আলোকে জেলা প্রশাসক ওই জমি ২৮ মে ২০০০ সাল থেকে ২৮ মে ২০৯৯ সাল পর্যন্ত ৯৯ বছরের জন্য মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইয়াকুব আলী ও তার স্ত্রী মোছাঃ হালিমা খাতুনের নামে কবুলিয়ত (লীজ) দেয়া হয়। তখন থেকে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে ওই জমি ভোগদখল ও চাষাবাদ করে আসছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। কিম্ত হঠাৎ ওই এলাকার ভূমি দস্য নামে খ্যাত প্রভাবশালী নুরুজ্জামান মুক্তিযোদ্ধাকে জমিতে চাষাবাদ করতে বিঘ্ন ঘটিয়ে ওই জমি নিজেদের দাবী করে দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে। এছাড়া নানাভাবে মুক্তিযোদ্ধা পরিবাকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে প্রভাবশালী নুরুজ্জামান। উপায়ান্তর না পেয়ে ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা থানায় অভিযোগ দেন। পরে থানা পুলিশ জমির মালিকানা দাবী করা নুরুজ্জামানের কাছে জমির কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেন নি।
এদিকে নুরুজ্জামান ২০১০ সালে জামুকা হতে মুক্তিযোদ্ধা সাময়িক জাল সনদের ব্যবস্থা করে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করেন। পরবর্তীতে সরকার সামরিক সনদ বাতিল করলে কৌশলী নুরুজ্জামান লালমনিরহাট শহরের বালাটারী এলাকার মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল মিয়ার নামে মুক্তিযোদ্ধা সেজে ভাতা গ্রহণ করতে থাকেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে বাতিল হয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার প্রক্রিয়া ও বন্ধ হয়ে যায় ভাতা।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, এলাকার ভূমি দস্যু খ্যাত নুরুজ্জামান প্রভাব খাটিয়ে অসহায় নিরীহ লোকের কাছ থেকে প্রায় ৩৫বিঘা জমি দখলে নিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে আসছে।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এরশাদুল আলমের সরকারি মুঠোফোনে কয়েকবার কল করলেও ফোন রিসিভ হয়নি।
উল্লেখ, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৬নং সেক্টরে যুদ্ধ করা ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযুদ্ধা ইয়াকুব আলীর ভারতীয় তালিকা নং ৪৩০৩৮৷ লালমুক্তি বার্তা নং ০৩০৪০১০৩৫৮, গেজেট নং ১৮৮৯, এমআইএস এ মুক্তিযোদ্ধা পরিচিতি নং ০১৫২০০০১৫১৫।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *