কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামের উলিপুরে নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রশাসনের নাকের ডগায় শ্রমিক সংগঠনের নাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। “কুড়িগ্রাম জেলা ট্রাক ট্যাংকলড়ী কাভ্যার্ডভ্যান ও ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়নের” নাম ব্যবহার করা হলেও জোড়পূর্বক টাকা আদায় করা হচ্ছে ওই সংগঠনের আওতাধীন নয় এমন পণ্য পরিবহনকারী ক্ষুদ্র যানবাহন থেকে। পৌর সদরের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক রাস্তার মোড় থেকে চাঁদাবাজির মাধ্যমে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও অজ্ঞাত কারণে নিরব প্রশাসন। আর এসব প্রকাশ্যেই করছেন ওই সংগঠনের উলিপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক ফরিজ উদ্দিন ও সড়ক সম্পাদক রুবেল মিয়া। তাদের নেতৃত্বেই গড়ে উঠেছে এই চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট।

ভূক্তভোগীদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উলিপুর পৌর শহরে রিক্সা, ভ্যান, মিশুক ও অটোরিক্সা (ইজিবাইক) যোগে পণ্য আনা নেয়ার পথে শহরের প্রধান মোড়গুলোতে পাহারা বসিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে জোড়পূর্বক টাকা আদায় করা হচ্ছে। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে যে কোন পণ্য ক্ষুদ্র পরিবহনে বহন করলেই ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড় গুনাইগাছ ব্রীজ, পূর্ব বাজার রেলগেট মোড়, পোষ্ট অফিস মোড় ও পুরাতন সিনেমা হল সংলগ্ন রাস্তায় প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সহস্রাধিক পণ্যবাহী ক্ষুদ্র যানবাহন থেকে অবৈধভাবে গড়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা চাঁদাবাজি করা হয়। সে হিসাবে প্রতি মাসে ৬ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকার চাঁদা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আরও জানা গেছে, “কুড়িগ্রাম জেলা ট্রাক ট্যাংক লড়ী কাভ্যার্ড ভ্যান ও ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়নের” সংগঠন পরিচালনার ব্যায় ও সার্ভিস চার্জ বাবদ (রশিদ মূলে) প্রকাশ্যে এই চাঁদাবাজি করা হলেও ওই সংগঠনের সাথে রিক্সা, ভ্যান, মিশুক ও অটোরিক্সা (ইজিবাইক) এই ক্ষুদ্রযান গুলোর কোন সর্ম্পক নেই। কিন্তু তারপরেও চাঁদা না দিয়ে এই যানবাহনগুলোর পণ্যসহ শহরের প্রবেশ করা ও বেড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। প্রায় ৬ মাস ধরে সংগঠনের নাম ব্যবহার করে ওই সংগঠনের উলিপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক ফরিজ উদ্দিন ও সড়ক সম্পাদক রুবেল মিয়াসহ কয়েকজন এই সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

রাস্তার মোড়গুলোতে আকাশ মিয়া, রাজু ও সাজ্জাদসহ কয়েকজন এ কাজে নিয়েজিত। রিক্সা, ইজিবাইক, ভ্যান, মিশুকে করে পণ্য বহন করার সময় সংগঠনের নামে ১০ থেকে ৩০টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করেন তারা। তবে ৩০ টাকা না দিলে কাউকে রশিদ দেয়া হয় না। তারা আরও বলেন, আমরা দিন গেলে কাজের বিনিময়ে টাকা পাই। উত্তোলনকৃত টাকা উলিপুর ট্রাক শ্রমিক অফিসে জমা দেয়া হয়। এদিকে প্রকাশ্যে অবৈধভাবে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলেও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন নিরব। ফলে পণ্যবহনকারী ক্ষুদ্র যানবাহনের দরিদ্র চালকগণ অসহায় হয়ে পড়েছেন।

থেতরাই ইউনিয়নের ভ্যান চালক কলিম উদ্দিন মিয়া বলেন, গাড়িতে কোন পণ্য তুললেই তারা টাকা আদায় করে কখনো ১০ টাকা আবার কখনো ৩০ টাকা। একটি ভাড়া খেটে কত টাকাই বা পাই। সেখান থেকেও শ্রমিক কল্যানের নামে টাকা দিতে হয়। অথচ শ্রমিকদের বিপদের সময় কখনই এই টাকা খরচ করা হয় না। নেতারাই এই টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে খায়। প্রশাসনের উচিত এসব চাঁদাবাজি বন্ধ করা। একই কথা বলেন, ধামশ্রেনী এলাকার ভ্যান চালক নিরাশা মিয়া। গুনাইগাছ এলাকার ভ্যান চালক আবু জাফর ও সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ভ্যান গাড়িতে ৬টি সিমেন্টের বস্তা নিয়ে যাওয়ার সময় গুনাইগাছ ব্রিজে ভ্যান আটকিয়ে সিমেন্টের বস্তা পরিবহনের কারণে ৩০ টাকা দাবী করে তারা। অনেক তোড়জোড় করে পরে ২৫ টাকা দিয়ে পাড় হয়ে এসেছি। এসব টাকা কোথায় কার পেটে যায় তার হিসাব কেউ রাখেনা। আমরা গরীব মানুষ, আমাদের উপর যত অত্যাচার। আমার ভ্যান, বৈধভাবে আমি যা ইচ্ছে তাই বহন করতে পারি। অথচ তারা জোর করে টাকা আদায় করছেন।

ইজিবাইক (অটো রিক্সা) চালক মোক্তার হোসেন ও হোসেন আলী বলেন, অটো রিক্সায় করে কাঁচাবাজার নিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে এক যুবক রিক্সা থামিয়ে শ্রমিক কল্যানের নামে ৩০ টাকা চায়। পরে অনেক অনুরোধ করে ২০ টাকা দিয়েছি। ৩০টাকা না দিলে তারা কোন রশিদ দেয় না। পরিবহনে যারাই কোন জিনিসপত্র বহন করে তাদের সবার কাছেই টাকা আদায় করা হয়।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা ট্রাক ট্যাংক লড়ী কাভ্যার্ড ভ্যান ও ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়নের উলিপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক ফরিজ উদ্দিন বলেন, রোডে চলাচলকারী ট্রাক, ট্যাংক লড়ী, কাভ্যার্ড ভ্যান ও ট্রাক্টরসহ সংগঠনের আওতাধীন যানবাহন থেকে শ্রমিক কল্যাণের জন্য ৩০টাকা করে তোলা হয়। রিক্সা, ভ্যান ও ইজিবাইক এগুলো আমাদের সংগঠনের আওতাধীন নয়। এগুলো থেকে টাকা তোলার নিয়ম নেই। তারপরেও যারা রোডে ডিউটি করে ক্ষুদ্রযানবাহন থেকে তারা হয়তো চা-পান খাওয়ার জন্য কিছু নেয়। তিনি আরও বলেন, পোষ্ট অফিস মোড় ও পুরাতন সিনেমা হল রোডে টাকা তোলা হয় বলে শুনেছি। তবে তিনি এই চাঁদাবাজির দায় নিতে অস্বীকার করেন।

উলিপুর পৌরসভার মেয়র মামুন সরকার মিঠু জানান, এই বিষয়ে ভূক্তভোগীরা আমার কাছেও মৌখিক অভিযোগ করেছেন। ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি-সম্পাদককে ডেকে এই অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ করতে বলা হয়েছে। যানবাহনের পৌর টোল যেখানে যেখানে আদায় করা হয়। তার পাশেই শ্রমিক কল্যাণের নামে এই চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। আমি বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারপরেও কেনো এই অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না তা আমার জানা নেই।

বিষয়টি নিয়ে উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ আশরাফুজ্জামান জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। সরকারি টোল ছাড়া রাস্তায় কোন ধরনের টাকা আদায়ের নিয়ম নেই। দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ চাঁদাবাজির ঘটনা আমাদেরকে কেউ জানায়নি। এরকম কোন নিয়ম নেই। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *