নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শেখ মোঃ সাইফুল ইসলাম।

গাইবান্ধার সাঘাটায় মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিচর্জা প্রকল্পে ভুয়া চাকুরি দেয়ার প্রলোভন দিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজনের কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে বাদিয়াখালী ত্রাণ ও পূর্ণবাসন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সহ একটি প্রতারক চক্র।

প্রতারক চক্রটি চাকুরির প্রার্থীদেরকে বিভিন্ন পদে ভুয়া নিয়োগ পত্র দিয়ে এসব টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রতারণার শিকার বেকার যুবক-যুবতী নিজেদের টাকা উদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

অবশেষে সাঘাটার কয়েক জন টাকা উদ্ধারসহ প্রতারকদের শাস্তির দাবি করে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছেন।

জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের গরীব অসহায় পরিবারের সদস্য প্রতারণার শিকার এসব যুবক-যুবতী ।

প্রতারণার শিকার ঘুড়িদহ গ্রামের দিনমজুর হায়দার আলীর ছেলে আরিফুল ইসলাম জানান, সাঘাটা উপজেলা হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজি (ইপিআই ) পদে চাকুরী করতেন আব্দুর রাজ্জাক তিনি আমাকে নিয়োগ পত্র দেখিয়ে বলেন, বাদিয়াখালী ত্রাণও পূর্ণবাস সংস্থার কমিটিতে আমি ও আমার স্ত্রী স্বপনা বেগম আছি।

এই সংস্থার অধিনে মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিচর্জা প্রকল্পে চাকুরী পাওয়ার সুযোগ আছে, তোমরা টাকা দিলে চাকুরী দিতে পারবো, চাকুরির লোভে তাঁর কথা মতো আরিফুল ইসলাম আব্দুর রাজ্জাককে ১ লাখ টাকা দিলে রাজ্জাক সে সময় অর্থাৎ ১১/০৪/২০১৯ ইং তারিখে বাদিয়াখালী ত্রাণ ও পূর্ণবাস সংস্থা কার্যালয়ে নিয়ে গেলে পরিচালক ওমর ফারুক তাকে জুমারবাড়ী ইউনিয়ন সুপার ভাইজার পদে নিয়োগ পত্র দেন।

হাসিলকান্দি গ্রামের আবু হোসেন জানান আমি আমার ছেলে মোশারফ হোসেন ও ভাতিজি শোভা খাতুসহ আসাদুর রহমানের চাকুরির জন্য ২ বছর আগে আব্দুর রাজ্জাককে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দিলে তাদের কে নিয়োগপত্র দেন।

এর পর আব্দুর রাজ্জাক আর দেখা করা বা চাকুরির বিষয়ে কোনো যোগাযোগ করেননি।

একই ভাবে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে উপজেলার ঝাড়া বর্ষা গ্রামের হাসান মিয়ার ছেলে বকুল মিয়াকে ঘুড়িদহ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কর্মী পদে, ৫০ হাজার টাকা দিয়ে হাটবাড়ি গ্রামের মৃত আব্দুল কদ্দুছ মোল্লার মেয়ে নাছরিন আক্তার সাঘাটা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কর্মী পদে, ১ লাখ টাকায় নাছরিনের ছোট বোন সিনিগ্ধা আক্তারকে সাঘাটা ইউনিয়ন সুপার ভাইজার পদে, ৫০ হাজার টাকায় সাঘাটা গ্রামের আব্দুল মজিদ মন্ডলের স্ত্রী ফাতিমা বেগমকে সাঘাটা ইউনিয়ন মাঠ পদে নিয়োগপত্র প্রদান করা হয়।

শুধু তাইনয় ঝাড়াবর্ষা গ্রামের ভ্যান চালক হরিবর রহমান তার ভ্যানে গাইবান্ধা সদর থেকে সাঘাটা হাসপাতালের ঔষধ নিয়ে আসার সুবাদে ইপিআই আব্দুর রাজ্জাকের সাথে তার পরিচয় ঘটে পরে সংস্থার পরিচালক ওমর ফারুকের সাথে তিনি যোগাযোগ করে দেন।

সেই সুযোগে ওমর ফারুক তাকে প্রতিজন লোকের জন্য ১০ হাজার করে টাকা বকশীস দেয়ার প্রলোভন দিলে সে ২৫ জনের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ওমর ফারুকে দেয়।

পরবর্তীতে মেডিকেল টেকনোলজি (ইপিআই) আব্দুর রাজ্জাক সুকৌশলে সাঘটা হাসপাতাল হতে পাবনা আটঘড়িয়া উপজেলা হাসপাতালে বদলী নিয়ে সেখানে কর্মরত আছেন।

শূধু রাজ্জাকই নন তার সাথে এলাকার বেশ কয়েক জন দালাল ও সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ওমর ফারুক, সহকারী পরিচালক উপ-পরিচালক যোগসাজসে একটি প্রতারক চক্র ৩ শতাধিত যুবক-যুবতীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

সূতে জানা যায়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক বিভিন্ন পদ অনুযায়ী নিয়োগ প্রাপ্তদেরকে সর্বউচ্চ ৫৬ হাজার থেকে ৮ হাজার ৫ শত টাকা পর্যন্ত বেতন দেয়ার কথা। কিন্তু বেতন পাওয়া তো দুরের কথা নিয়োগ জামানতের টাকা নিয়ে নিয়োগ পত্র দেয়ার পর থেকে সংস্থার সংশ্লিষ্ট সকলেই লাপাত্তা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *