নজরুল ইসলাম তোফা ।।
আমাদের দেশে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যেখানে চারুকলা শিক্ষা দান হচ্ছে। শিক্ষাধিনায়করা এখনও চারুকলাকে বিদ্যার সম্পূর্ণ মর্যাদা দিতে কুণ্ঠিত এবং কুণ্ঠিত বলেই তাঁরা মনে করেন চারুকলা শিক্ষক হতে গেলে সাধারণ শিক্ষার তেমন প্রয়োজন নেই, নেই ভাষাজ্ঞান ও তত্ত্বজ্ঞান সম্পর্কে প্রচুর জানা শোনা। নাচতে পারলেই নৃত্যবিদ, গান গাইতে পারলেই সংগীতবিদ, অভিনয় করতে পারলেই নাট্যবিদ, আঁকতে পারলেই চিত্রাঙ্কনবিদ, মূর্তি গড়তে পারলেই মূর্তিনির্মাণবিদ এবং লিখতে পারলেই কাব্যবিদ হওয়া যায়। অথচ এঁরা জানার প্রয়োজন বোধ করে না যে প্রাচীন ভারতে যাঁরা চারুকলা তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করছেন এবং চারুকলার শিক্ষকতা মহলে কিভাবে অবস্থান করছেন। তাঁরা সকলেই বহুশাস্ত্রজ্ঞবিদ অথবা পন্ডিত। তাঁরা একাধারে শাস্ত্রবিদ ও কলাকুশলীর মর্যাদা নিয়ে শিল্প-সুন্দর, মন ও জীবনের জন্য কাজ করছেন।
আমাদের এই সব শিক্ষাধিনায়করা চারুকলার যোগ্যতম শিক্ষক তিনিই যিনি একাধারে বহুশাস্ত্রজ্ঞবিদ বা পন্ডিত অথবা প্রয়োগদক্ষ শিল্পী এসব কথাটি একেবারেই মনে রাখেন না। যিনি শুধু পন্ডিত, শিল্পী নন তিনি যেমন শিক্ষক হিসেবে অযোগ্য। তেমনি যিনি শুরু শিল্পী, কিন্তু শাস্ত্রজ্ঞানবিহীন তিনিও তেমনি অযোগ্য। চারুকলা শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে হলে চারুকলা শিক্ষকের আসনে এমন সব গুনীকে বসাতে হবে যাঁরা সমাজের অন্যান্য বিদ্যার শিক্ষকের মতোই সাধারণ জ্ঞান, বিজ্ঞান এবং বিশেষ করে সকল শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। চারুকলায় বিশেষজ্ঞ হতে যারা চান তাঁকে অবশ্যই শিল্পতত্ত্ব পাঠ করতে গিয়ে দর্শন, মনস্তত্ত্ব প্রভৃতি শাস্ত্রে পৌঁছতে হবে বলে মনে করি।
অধ্যাপনার জন্যই যখন এত জ্ঞান-বিদ্যার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে, তেমনি গবেষণা করা ও গবেষণা পরিচালনার জন্য আরো গভীরে প্রবেশ এবং বিস্তৃতির একান্ত প্রয়োজন।
আমি মনে করি রাজশাহী চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা শিল্পশিক্ষার জগতে এক যুগান্তর এনে দিয়েছে। চারুকলা নিয়ে বি, এফ, এ পাশ করছে যাঁরা চারুকলা নিয়ে গবেষণা করছে। তাঁরা চারুশিল্প শিক্ষার মানকে অবশ্যই উন্নত করবে বলা যায়। এমন একদিন আসবে যেদিন রবীন্দ্র ভারতীর মতো চারুকলা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে এবং এম, এফ, এ উপাধিধারীদের উপরে শিক্ষাদানের মহা দ্বায়িত্ব নাস্ত হবে।