নূর-ই-আলম সিদ্দিক,নাগেশ্বরী(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধিঃ
তখন ফাগুনের আকাশে ঠিক খাড়া দুপুর,সে দুপুরে শংকোষ নদীর তীর ধরে চলছিলাম পেশাগত কাজে। কিছু পথ যেতে অদুরেই চোখে পড়ল শংকোষের হাঁটু জলে খালি গায়ে কি যেন পরিস্কার করছে একটি শিশু। তবে শিশুটি ছেলে নাকি মেয়ে তা ঠিক বুঝতে পাড়লাম না। এ খাড়া দুপুরে শিশুটি একা একা কি পরিস্কার করছে নদীর জলে – মনের ভেতর এমন উত্তর খুঁজতে শিশুটির খানিকটা কাছে যেতেই আমার চলার শব্দে পিছন ফিরে তাকালো শিশুটি,তাকাতেই মাথা ভর্তি এলো ঝাঁকড়া চুল, নাকে ফুল ও কানে ছোট ফুল দেখে ছেলে নাকি মেয়ে তা বুঝার বাকি রইল না।
তবে খালি গায়ে একদম শর্ট হাফপ্যান্ট পরিহিত অবস্থায় দুর থেকে বুঝার উপায় ছিল না যে সে একটি মেয়ে শিশু।
ওর সাথে কথা বলে জানা গেল ওর নাম মরিয়ম। বয়সটা যে এখনো এগারো পেরোয়নি সেটা তার শারীরিক অবয়ব দেখে সেটা অনুমান করা যায়। ফাগুনের আকাশে মাথার উপরে খাড়া সূর্যটার চকচকে রোদখানি তখন চিকমিক করছিল শংকোষের জলে। আর সে চিকচিক রোদের আভাটুকু নদীর জল ছাপিয়ে এসে পড়েছিল ছিল শিশু মরিয়মের চোখে মুখে সারা শরীরে। আমি দেখলাম- সে রোদ উপেক্ষা করে তখনো মনোযোগ দিয়ে কি যেন নদীর পানিতে পরিস্কার করছিল মেয়েটি- যেন এদিক সেদিক তাকাবার সময়টুকু নেই। এবার খুব কাছাকাছি গিয়ে দেখলাম নদীর পানিতে ঘাস ধুয়ে পরিস্কার করছিল মেয়েটি। মেয়েটির কাজের ফাঁকে ফাঁকে কথা বলে তার কাজ ও তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করলাম। যতটুকু জানলাম- ওর বাবার নাম জয়নাল,বাড়ি নাগেশ্বরীর প্রস্তাবিত কচাকাটা উপজেলার কচাকাটা ইউনিয়নের ভোটেরহাল্যা গ্রামে। মরিয়ম ছাড়াও তার বড় এক বোন, এক বড় ভাই ও তার ছোট আরও একটি ছোট ভাই রয়েছে। মানে তারা চার ভাই বোন। বড় বোনের বিয়ের পর পারিবারিক কারণে বাবার বাড়িতে থাকেন,আর বড় ভাই কাজ করে বাজারের একটি মুদি দোকানে। আর সে পড়াশুনা করে স্থানীয় মধ্য কাটাজেলাশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সে এবার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। মরিয়মের বাবার সম্পদ বলতে একখানা ঘোড়া গাড়ি। পেশা হিসেবে মরিয়মের বাবা ঘোড়ার গাড়ি চালায়। সেখান থেকে যতটুকু আয় করে তা দিয়ে কোনোমতে চলে মরিয়মদের সংসার। ঘোড়ার গাড়ি চালানো ছাড়া তার বাবা আর কিছুই করে না বলে জানায় মরিয়ম। ঘাস তোলা এবং ধোয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মরিয়মের যেন মুখস্থ উত্তর – “স্কুল বন্ধ দেহি ঘোড়ার ঘাস তোলং,স্কুল খোলা থাকলে কি আর ঘাস তোলং – তহন না মুই স্কুল গেনু হয়।”
সে সাথে স্কুল খুললে প্রতিদিন স্কুলে যাবে বলে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় মরিয়মের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *