এস.এম.রকি,খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
স্বাভাবিক সন্তান প্রসব ও প্রসূতি সেবায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

আধুনিক এ যুগে জীবনমান উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা ব্যবস্থারও উন্নতি হয়েছে অনেকগুণ। কিন্তু প্রসবকালের ব্যথার অনাকাঙ্ক্ষিত ভয়, বেসরকারী হাসপাতাল আর ক্লিনিকের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং গর্ভবতী মা ও পরিবারের অসচেতনতায় কমতে শুরু করে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব। আবার গ্রামাঞ্চলের কিছু অদক্ষ দাই’মা ও ধাত্রীর কারণে অনেক সময় প্রসূতি মায়েদের মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।

এমন এক পরিস্থিতিতে খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যতিক্রমে উদ্যোগে বদলে গেছে প্রসূতি সেবার দৃশ্যপট। সিজারের নামে বাণিজ্য, দালাল চক্র এবং অদক্ষ ধাত্রীর হাত থেকে প্রসূতি মায়েদের রক্ষায় এবং স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে মায়েদের আগ্রহ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে নানামুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।

এই কার্যক্রমে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, মিডওয়াইফ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীগণ।

জানা যায়, প্রসূতি মায়েদের সেবায় আগ্রহ বাড়াতে বিভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এজন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে প্রসূতি নারীদের বিনামূল্যে ‘প্রসূতি কার্ড’ দেয়া হয়। এরপর ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে কাউন্সেলিং আর ফ্রি চেকআপ। এর সাথে হটলাইনের মাধ্যমে সেবা প্রদান, বিনামূল্যে ঔষধ প্রদান ও পরীক্ষা-নিরিক্ষার ফলে প্রসূতি সেবায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। প্রসূতি কার্ড ও নরমাল ডেলিভারি করাতে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষক, চেয়ারম্যান-মেম্বার, ইমাম ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন এনজিওর স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছানো হয় প্রসূতি মায়েদের কাছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরাও নিজেরা বিভিন্ন স্থানে গিয়ে কাউন্সিলিং প্রদান করেন।

এই কার্যক্রমের সফলতা হিসেবে এই বছরের জানুয়ারী মাস থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা ১৫৫ টি এবং প্রসব পূর্ববর্তী সেবা গ্রহীতার সংখ্যা প্রায় ১২শ এবং প্রসব পরবর্তী সেবা গ্রহীতার সংখ্যা দেড়শ। হাসপাতালে এসে নরমাল ডেলিভারি করানোর সংখ্যা দিন দিন এভাবেই বাড়ছেই। গত ২০২১ সালে যেখানে স্বাভাবিক সন্তান প্রসব হয়েছে ১৩৮০, এএনসি সেবা নিয়েছে প্রায় সাড়ে তেইশ হাজার জন ও পিএনসি সেবা গ্রহণ করে প্রায় আড়াই হাজার জন। যা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশী।

যার ফলে প্রসূতি সেবা ও স্বাস্থ্য সেবার মান বিবেচনায় বিগত বছরে স্বাস্থ্য সেবায় বিভাগের তৃতীয় ও জেলার প্রথম হয়েছিল খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) পাকেরহাটস্থ খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নরমাল ডেলিভারী হওয়া উপজেলার আংগারপাড়া এলাকার আমজাদ হোসেনের স্ত্রী সালমা বেগম জানান, স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে সাহস পেয়েছি। তারা নিয়মিত খোঁজ-খবর নিয়ে পরামর্শ দেয়। ফলে ব্যাথা উঠার সাথে হাসপাতালে ভর্তি হই এরপরে তাদের তৎপরতা দেখে আমরা অনেক খুশি। হয়তো অন্য কোথাও গেলে সিজার করতো। যদিও আমরা তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম, তবে চিকিৎসক, নার্স ও মিডওয়াইফদের পরামর্শে নরমাল ডেলিভারি হওয়ায় অত্যন্ত খুশি।

লেবার ওয়ার্ড ইনচার্জ মিডওয়াইফ রমা রায় বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা ও সকলের স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বদিচ্ছার ফলে নরমাল ডেলিভারীর সংখ্যা বাড়ছে এবং দিন দিন নরমাল ডেলিভারিতে প্রসূতিদের আগ্রহ বাড়ছে। কারণ হাসপাতালে নিরাপদে এ ডেলিভারি করানো হলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে না এবং পাশাপাশি কোনো প্রকার অর্থও ব্যয় হয় না। সেই লক্ষ্যে আমরা সেবা দিয়ে থাকি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. শামসু্দ্দোহা মুকুল বলেন,পুরো উপজেলার গর্ভবতী মায়েদের ডাটাবেজের মাধ্যমে তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া হয় এবং প্রসব পূর্ববর্তী ও পরবর্তী চিকিৎসা ও পরমার্শ প্রদান করা হয় যার ফলে নিয়মিত নরমাল ডেলিভারীর সংখ্যা বাড়ছে। নরমাল ডেলিভারি পর সমাজ সেবা অধিদফতরের সহযোগিতায় জন্ম নেয়া শিশুকে উপহার দেওয়ার বলে তিনি জানান।

এই কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ জানান আরএমও ডা. শামসুদ্দোহা মুকুল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *