শিরোনাম–একটি লাল গোলাপ
—————মাহফুজা পারভীন মনি
রোজ অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে দেখি,
একগুচ্ছ লাল টকটকে গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে
গোলাপি রেড সিগনালে আটকে থাকা গাড়িগুলোর ডোরে
টোকা দিয়ে বলে, সাব ফুল নিবেন ফুল,,?
এই দেহেন কত সুন্দর লাল টকটকে তাজা গোলাপ।
কেউ নেয় আবার কেউ ধমক দিয়ে গাড়ির গ্লাসটা বন্ধ করে দেয়
গোলাপির উপর বিরক্ত হয়ে।
কিন্তু আমি প্রতিদিন ওর কাছ থেকে একটা করে লাল গোলাপ নেই।
একদিন আবারও সেই গ্রীন সিগনালে আটকে আছি।
লম্বা গাড়ির লাইন সামনে পেছনে।
এতবড় লম্বা গাড়ির লাইন দেখে গোলাপির মনে খুব উল্লাস,
আজ তার সবগুলো গোলাপ ফুল নিমেষেই বিক্রি হবে। কিন্তু না,
সবাই তাকে তাড়িয়ে দিলো,
তাদের দামী গাড়িতে গাঁ ঘেঁষে দাড়িয়েছে বলে।
আমার কাছে আসা মাত্রই ওর উল্লাসীত মুখটা
মলিন দেখে সবগুলো ফুল আমি সেদিন নিলাম,
যা দাম হয় তারচেয়ে আর ২০ টাকা বেশি দিয়ে।
কারণ আমার মনে হলো এ-ই কাঠফাটা রোদে পুরে
ফুল বিক্রি করে দুটো টাকা রোজগারের জন্য।
তারপর ওর কাছে জানতে চাইলাম,
ওর পরিবারে কে কে আছে ?
কেনই বা ও প্রতিদিন এভাবে ফুল বিক্রি করে
এই জ্যাম জটের রাস্তায়?
ও বললো আমরার তিন বইন আর আমার মা আছে।
বাবা আমগোরে ফালাইয়া থুইয়া চলে গেছে গা,
আজ ৮/৯ বছর হইবো।
আমি বললাম বাবা কেন তোমাদের ছেড়ে চলে গেছে,?
ও বললো আমি তহন অনেক ছুডো,
বাজান মায়ের লগে ঝগড়া কইরা কইলো,
বেডি তিন তিনখান মাইয়া জন্ম দিছোস,
একখান তো পোলা দিতে পারলি না।
তাই থাক তুই তর মাইয়া গো লইয়া।
এই কইয়া বাপজান ঐ যে চল্ল্যা গেল
আর ফিইরা আহে নাই।
তখন থাইকা মায়ে ২/৩ বাসায় কাম করে
আর আমি সকালে স্কুলে পড়তে যাই।
আর বিহালে ফুল বিক্রি কইরা যে কয়ডা ট্যাহা পাই
তা মায়ের হাতে তুইল্লা দেই সংসার চালোনের লাহি।
কথা শেষ হবার সাথে সাথে গ্রীন সিগনাল উঠে গেলো
আার দ্রুতগতিতে গাড়িগুলো চলা শুরু হলো।
গোলাপি মনের খুশিতে দৌড়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে
দ্রুত গতির একটি গাড়ির ধাক্কা খেয়ে পরে গেলো গাড়ির নিচে।
ওর নিথর দেহটা পরে রইলো রাস্তায়।
টকটকে লাল রক্তে ভেজা ওর জামা,
হাতের মুঠোয় তখনও টাকাগুলো শক্ত করে ধরে রেখেছে।
শুধু চোখ দুটো খোলা আছে কারো অপেক্ষাতে।
আমি গোলাপি বলে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে
ওর মুখে হাতটা দিয়ে দেখছিলাম নিঃশ্বাস আছে কিনা,
হাতে পালস দেখে মনে হলো গোলাপি আর নেই।
শুধু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হেসে চোখ বন্ধ করলো।
আমি নির্বাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছি,
কি সুন্দর ওর ঐ নিষ্পাপ মুখটা, সত্যিই যেন একটা গোলাপ।
সেদিনের পর থেকে আমার চোখের সামনে ওর মুখটা ভেসে উঠে,
ওর কথাগুলো কানে বাজে।
আর এরপর থেকে ওর মতো যেই- লাল গোলাপ বিক্রি করতে আসে রাস্তায়,
তার কাছ থেকে আমি সবগুলো ফুল কিনে নেই।
আর মনে মনে বলি যেখানেই আছিস ভালো থাকিস গোলাপি।
তারিখ–১৩/৮/২০২২

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *