ইশরাত জাহান চৌধুরী, মৌলভীবাজার ঃ ৩য় দফায় জাতীয়করণকৃত মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ধূপাটিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভবন না থাকায় জীর্নশীর্ণ ঘরেই চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত মনোরম ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও পাকা শ্রেণিকক্ষ ও বিদ্যুৎ সুবিধা না থাকায় শিক্ষার্থীরাও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অপরদিকে কোনরুƒপ বেতন ভাতা ছাড়াই দু:খ-কষ্টের মধ্যদিয়েই দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পতনউষার ইউনিয়নের ধূপাটিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বর্তমান সরকারের তৃতীয় দফায় জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে বিদ্যালয়টিতে চারজন শিক্ষক শিক্ষকতা করছেন। চর্তুপাশে বাঁশের বেড়া ও টিনসেডের ঘরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মন্ডিত মাঠের এক প্রান্তে বিদ্যায়টি স্থাপন করা হলেও নেই বিদ্যালয় ভবন কিংবা পাকা টয়লেট। বাঁশের বেড়া দেয়া চারটি কক্ষেই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকায় প্রচন্ড গরমে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় দেড়শ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের জন্য খেলাধূলার মনোরম পরিবেশ থাকলেও ভবন ও আসবাবপত্রের অভাবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, প্রতি বছর চাঁদা করে বিদ্যালয়টির সংস্কার কাজ করা হয়। দ্রুত একটি ভবন পাওয়া গেলে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার মান আরো উন্নত হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও শিক্ষকদের মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারী তিন ধাপে দেশের রেজিষ্টার্ড, রেজিষ্টার্ড বিহীন ও এনজিও পরিচালিত ২৬ হাজার ৫শ’ বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ৩য় ধাপে ২০১৫ সনে তিন দফায় ৬৪৯টি বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়। এসব বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষকরা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই কোন ধরনের বেতন ভাতা ছাড়াই শিক্ষকতা করছেন। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে কর্মরত শিক্ষকরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তবে তৃতীয় দফায় জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাতীয়করণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে খসড়া গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক মো. নূরুল মোক্তাকীন বলেন, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাকালীন থেকেই চাঁদা সংগ্রহ করে সংস্কার করা হয়। তবে বিদ্যালয়ের ভবন ও বিদ্যুৎ সুবিধা না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সার্বক্ষনিক পাঠদান চালিয়ে গেলেও আজোবধি কোন ধরনের বেতন-ভাতা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দু:খ-কষ্টের মধ্যদিয়েই তারা দিনাতিপাত করছেন। এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গকুল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ৩য় ধাপে জাতীয়করণকৃত এই বিদ্যালয়টিতে আমি একাধিকবার পরিদর্শন করেছি। টিনসেডের ঘর হলেও এখানে পড়াশুনার মান ভালো এবং অন্যান্য বিদ্যালয়ের তুলনায় এই বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ দেখে নিজে অভিভুত হয়েছি। বিদ্যালয়ের ভবনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। দু’এক বছরের মধ্যেই বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণের সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ইতিপূর্বে খসড়া গেজেট প্রকাশ হয়েছে। চুড়ান্ত গেজেট প্রকাশ হওয়ার পর থেকে শিক্ষকরা বেতন-ভাতা সহ সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা প্রাপ্ত হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *