কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

চর রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নিয়ে শুরু হয়েছে টানাহেঁচড়া। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের কারণে এক বিদ্যালয়ের নামে চলছে দুই জায়গায় পাঠদান। ঘটনাটি ঘটেছে জেলার চর রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙনের ফলে ২০১৯ সালে বিদ্যালয়ের মূল কাঠামো ভেঙে বিক্রি করা হয়। এরপর অস্থায়ীভাবে সেখানে পাঠদান করা হলেও চলতি বছরে আবারও ভাঙন দেখা দেয়ায় গত ১৩ মার্চ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে ভবন স্থানান্তরের জন্য লিখিত আবেদন করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম। সেই আবেদনে সুপারিশ করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। সিদ্ধান্ত হয় ক্যাচমেন্ট এলাকার মধ্যে অবস্থিত জনবসতিপূর্ণ কোদালকাটি ইউনিয়নের পূর্ব বিলপাড়া গ্রামে স্কুলটি স্থানান্তরিত করা হবে। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম গত ৮ এপ্রিল কাউকে কিছু না জানিয়ে বিদ্যালয়ের ভবন ভেঙে ব্রহ্মপুত্র নদের অপর পাড়ে মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের তারাবর মৌজার জনবসতিহীন নিজ এলাকা ভেলামারী গ্রামে বিদ্যালয় ঘর স্থাপন করায় শুরু হয় দ্বন্দ্ব।

সরেজমিনে গিয়ে দেয়া যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ১১জন শিক্ষার্থী নিয়ে জনবসতীহীন একটি খোলা চরে বিদ্যালয়ের ভবন স্থাপন করেছেন। সেখানে মাত্র ৭/৮টি বসতবাড়ী রয়েছে। অপরদিকে সহকারী শিক্ষকগণ উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের শংকর মাধবপুর বিলপাড়ায় একটি ভাঙ্গা টিনশেড ঘরের মধ্যে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছেন। সেখানে দেড়শ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। দুই বিদ্যালয়ের একটি ব্রহ্মপুত্রের এ পাড়ে অপরটি ওই পাড়ে। মাঝখানে ৪ কিলোমিটারব্যাপী দীর্ঘ নদীপথ।

সহকারী শিক্ষক আমিনুল ইসলাম জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্তা করেন না। তিনি ২০১৯ সালে বিদ্যালয়ের একটি টিনশেড ঘর ও লোহার এঙ্গেলসহ তিন লক্ষ টাকার মালামাল নিলাম ছাড়াই বিক্রি করে দেন। এ বছর বিদ্যালয় ভবন ভাঙনের কবলে পড়লে সিদ্ধান্ত হয় ক্যাচমেন্ট এলাকার মধ্যে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরিত হবে। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক একগুয়েমি করে নিজ এলাকায় বিদ্যালয় ভবন নিয়ে গেছেন। আমরা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কথা বিবেচনা করে তিনজন সহকারী শিক্ষকই ক্যাচমেন্ট এলাকায় পাঠদান চালাচ্ছি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান সরকার বলেন, কমিটির মিটিং ডেকে বিদ্যালয় ভবন ভাঙার কথা ছিল। কিন্তু রাতারাতি প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় ভবন ভেঙে অন্য ইউনিয়নে নিয়ে গেছে। এছাড়াও এই এলাকায় একাধিক বিএ পাশ অভিভাবক থাকলেও নিজের বিএ পাশ করা স্ত্রীকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি করে স্বেচ্ছাচারিতামূলক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।

অভিভাবক আলাউদ্দিন জানান, পূর্বপাড়ে তিন গ্রামের দেড় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় ভবন নিজ এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় খোলা আকাশের নীচে শিক্ষার্থীদেরকে পাঠদান করা হচ্ছে।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, এ স্কুলের সব সহকারী শিক্ষকের বাড়ি উপজেলা শহরে। তারা এ দুর্গম এলাকায় আসতে চায় না। এ কারণে তারা দ্বিমত করছেন। অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বছর মাত্র দেড় লাখ টাকা সরকারি বরাদ্দ পেলেও বিদ্যালয়ের কাজে ৪ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন তিনি।

দুই জায়গায় পাঠদান চলার কথা স্বীকার করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন জানান, উপজেলা শিক্ষা কমিটি এবং বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি স্থানান্তরের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তু নিতে নিতে পারেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা শিক্ষা কমিটির সদস্য সচিব অমিত চক্রবর্ত্তী জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমাকে অবগত করা হয়েছে। আমরা সরেজমিনে দেখে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সবাইকে নিয়ে একটি সমাধানে আসব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *