কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

দীর্ঘ দিন যাবৎ কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় অবস্থিত ভাসমান তেল ডিপো যমুনা ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের বার্জ দুটি তেল শূন্য রয়েছে। ডিপো দু’টি তেল শূন্য থাকায় এলাকায় তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। এদিকে তেল নিয়ে আসা মেঘনা পেট্রোলিয়াম এর একটি জাহাজ নাব্যতা সংকটে গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে বকসিগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ীর আনন্দবাজার এলাকায় আটকে আছে। বিআইডব্লিউটিএ’র সহায়তা পেলে জাহাজটি চিলমারী আসতে পারবে বলে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা জানান।

জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ভাসমান তেল ডিপো পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি কোম্পানী স্থাপিত হয়ে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর ও লালমনিরহাট জেলায় তেল সরবরাহ করে আসছিল। তেল ডিপোটি স্থাপনের কয়েক বছরের মাথায় পদ্মা তেল কোম্পানীটি বার্জ মেরামতের অজুহাত দেখিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নেয়। এরপর থেকে মেঘনা ও যমুনা ওয়েল কোম্পানী দুটি এ অঞ্চলে তেল সরবরাহ করে আসছে। এরমধ্যে যমুনা তেল ডিপোর আভ্যন্তরিণ কোন্দলের ফলে গত বছর জানুয়ারী থেকে ডিপোটি তেল শুন্য হয়ে পড়ে। এমনকি ডিপোটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পদটিও শুণ্য রয়েছে প্রায় ১ বছর ধরে। অপরদিকে মেঘনা তেল ডিপোটি গত ১৩ডিসেম্বর থেকে তেল শুন্য থাকার পর কোম্পানীর এমটি মধুকর নামে একটি জাহাজ ২ লাখ ৬৭ হাজার লিটার তেল নিয়ে চিলমারী অভিমুখে রওনা দেয়। গত ১০ ফেব্রুয়ারী জাহাজটি নাব্যতা সংকটের কারনে বকসিগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ীর আনন্দবাজার এলাকায় আটকে রয়েছে (ক্রাক গ্রাউন্ড করে)। সেখান থেকে জাহাজটি উদ্ধারের চেষ্টায় ব্যার্থ হয়ে জাহাজটির সুপারইনডেনডেন্ট সেখানেই তেল খালাসের জন্য চিলমারী ডিপো সুপারের নিকট চিঠি লেখেন।
স্থানীয় সুত্র জানায়, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর ও লালমনিরহাট এলাকার কৃষি সেচ মৌসুমে ভাসমান তেল ডিপো থেকে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৫শ ব্যারেল বা ৩ লাখ লিটার তেল সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন নদ-নদীতে চালিত নৌকা, ড্রেজার মেশিন, জমি চাষের ট্রাক্টর, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চালিত জেনারেটর, মাহেন্দ্র গাড়ী, নছিমন-করিমনসহ বিভিন্ন ইঞ্জিন চালিত যন্ত্র চালনার জন্য প্রতিদিন আরও প্রায় আড়াই শ থেকে ৩শ ব্যারেল বা ৫০-৬০ হাজার লিটার তেলের চাহিদা রয়েছে। ডিপো দুটিতে দীর্ঘদিন থেকে তেল শুণ্য থাকায় তেলের চাহিদা পুরন করতে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এতে প্রায় প্রতিদিন ৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত লেনদেন হচ্ছে এলাকায় সৃষ্ট তেল বাজারে। শুধু তাই নয়, এভাবে চলতে থাকলে ডিলারদের হাতে থাকা দীর্ঘ দিনের খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতারা হাত ছাড়া হয়ে যাবেন। ফলে চিলমারীর তেল ব্যবসায়ীরা খুচরা বিক্রেতাদের নিকট পড়ে থাকা বাকী অর্থ উত্তোলন করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়বেন। অপরদিকে ডিপো দুটি বন্ধ থাকায় প্রতিদিন খেটে খাওয়া প্রায় ৩শ শ্রমিক কাজ না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছে।
চিলমারী ভাসমান তেল ডিপো দুটিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা তেল বাজার জোড়গাছ বাজারে সরেজমিন গিয়ে কথা হয় খুচরা তেল ব্যবসায়ী বাদল, রাশেদুল ইসলাম, মমিনুল, ধীরেন্দ্র নাথ, সুইটসহ অনেকের সাথে। তারা বলেন, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপো থেকে তেল নিতে অতিরিক্ত খরচ না থাকায় আমরা প্রতি লিটার তেল ৬৫ টাকায় বিক্রি করেছিলাম। বর্তমানে দুর থেকে তেল আনতে পরিবহন খরচ বেশী হওয়ায় বেশী দামে তেল বিক্রি করছি। খুচরা তেল বিক্রেতা মমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ডিপো দু’টি তেল শুন্য থাকায় জ্বালানি তেলের উপর নির্ভরশীল ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

এ ব্যাপারে মেঘনা ওয়েল কোম্পানীর ডিপো সুপার(অপারেশন) মোঃ আইয়ুব আলী বলেন, তেল নিয়ে আসা একটি জাহাজ নাব্যতা সংকটে নদীতে আটকে পড়ায় এটি নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছে। বিআইডব্লিউটি’র কর্তৃপক্ষ সুদৃষ্টি দিলে জাহাজটি নিরাপদে ডিপোতে আসতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *