নিজস্ব প্রতিনিধিঃ

নানা অনিয়ম দুর্নীতি ও অপকর্মের নথিপত্র ধামাচাপাসহ নিয়ম বর্হিভূত সভা আহ্বান করার অভিযোগ উঠেছে  রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার খাতাপত্র মসজিদে পাশে রেখে শিক্ষকদের প্রবেশ করতে না দিয়ে সভা চালাচ্ছেন চেয়ারম্যান। সভা পরিচালনায় নেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত পুলিশিং নিরাপত্তা। এক কথায় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ দিয়ে এই সভা কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে সভার কোন কোরাম পূর্ণ না করে, মাত্র ২ জন সদস্য দিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মুলত চেয়ারম্যানের নানা অনিয়ম দূর্নীতি ধামাচাপা দিতেই তাঁর এই আয়োজন।  

১০ ডিসেম্বর (শনিবার) বেলা ১১টায় শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অথচ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত চলমান। তদন্ত চলমান অবস্থায় তিনি সভা করতে পারেন কি না তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। 

শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, ২০২০ সালের ৫ই আগস্ট থেকে গত বছরের ২৪শে নভেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা বোর্ডে কলেজ পরির্দশকের দায়িত্ব পালন করেন প্রফেসর হাবিবুর রহমান। এরপর ২৫শে নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিবের এক আদেশে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান হাবিবুর রহমান। দায়িত্ব পেয়ে বিভিন্ন বিতর্কিত কাণ্ডে নতুনভাবে আলোচনায় আসেন তিনি। সূত্র জানায়, সম্প্রতি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পারিশ্রমিক বিল থেকে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে। গত বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ব্যবহারিক, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও সনদ যাচাই বাছাইসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পারিশ্রমিক তুলে এ টাকা আত্মসাৎ করেন বলে গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশ হয়। অভিযোগটির ব্যাপারে বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত চলছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৩রা আগস্ট শিক্ষা বোর্ডের জনবল কাঠামো তৈরির জন্য ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটিতে আহ্বায়ক ছিলেন সাবেক বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর নুরুল আলম। দু’জন রয়েছেন প্রেষণে নিয়োজিত কর্মকর্তা। আর বোর্ডের স্থায়ী দুই কর্মকর্তা হলেন কমিটির বাকি দুই সদস্য। এ কমিটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ না করে একটি প্রবিধানমালা তৈরি করেছে। যদিও তাতে কমিটির দুই সদস্য স্বাক্ষর করেননি। তবে শনিবার সভায় এ প্রবিধানমালা অনুমোদন করানো হবে বলে একটি সূত্র গণমাধ্যমেকে জানিয়েছে। অথচ নিয়মানুযায়ী ১৫ দিন পূর্বে বোর্ড সভার এজেন্ডা সদস্যদের নিকট পাঠাতে হয়। সেটি অনুসরণ করা হয়নি এ সভার জন্য। অভিযোগ রয়েছে, হাবিবুর রহমান কলেজ পরিদর্শক থাকাকালীন ইন সি টু হিসেবে পদায়ন পেয়েছিলেন। সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে বোর্ডের তহবিল থেকে ২৫ লাখ টাকার অধিক বেতন-ভাতা গ্রহণ করেন তিনি। তার চাকরির সময়সীমা রয়েছে আর মাত্র দু’মাস। অতীতের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি আড়াল করতে তড়িঘড়ি করে শনিবার সভা আহ্বান করা হয়েছে। এ ঘটনায় বোর্ডের কর্মকর্তারা বিস্মিত।

এ বিষয়ে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর হাবিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এর সভাপতি মঞ্জুর খান বলেন, সভায় কোরাম পূর্ণ আছে কি না আমি জানি না। এটা আপনার নিকট থেকেই জানতে পারলাম। তবে সভায় কোরাম পূর্ণ না হলে সেটি অবৈধ। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদে এই সভার গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বোর্ড সভা নিয়মিত একটি কাজ। এটা পরে করলেও হবে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বোর্ড সভার কারণে শিক্ষকদের খাতাপত্রসহ শিক্ষা বোর্ডে প্রবেশ না করতে দেওয়াটা অমানবিক। কারণ তারা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ এসএসসি’র খাতাপত্র দেখছেন। সেই খাতাপত্র সহ তারা রাস্তায় বা মসজিদের পাশে রাখাটা চরম অপমানের।

কথা বললে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হুমায়ুন কবির লালু বলেন, বোর্ড সভার বিষয়ে আমাদের কোন চিঠি করেননি চেয়ারম্যান। তবে কোরাম পূর্ণ না করে সভা করছেন তিনি। সভা চলাকালে আজ বোর্ডের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রবেশ নিষেধ করেছেন তিনি। যারা বোর্ডের ভিতরে ছিলেন তাদেরও বের করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি এসএসসি’র খাতাপত্র নিয়ে আসা শিক্ষকদেরকেও ঢুকতে দেওয়া হয়নি। 

এ বিষয়ে জানতে শিক্ষা বোর্ডের সচিব হুমায়ুন কবিরকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *