জামালপুর প্রতিনিধি ॥
স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পাল্টাপাল্টি মিছিল করেছে। পুলিশের কঠোর অবস্থানের কারণে বড় ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে এক পক্ষের ট্রাক্টর থেকে বেশ কিছু দেশীয় রাম দা জব্দ করা হয়েছে। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আটটা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে এই উত্তেজনা।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো.শাকিরুজ্জামান রাখাল এই বিরূপ মন্তব্যে করেছেন। এর জের ধরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার ঘটনা ঘটেছে। সংসদ সদস্যদের অনুসারীরা চেয়ারম্যান রাখালের ব্যক্তিগত কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এই নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। দুইপক্ষের মধ্যে চলে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার পুলিশ কঠোর অবস্থান নিয়ে করে লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র জব্দ করেছে।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার সামনে থেকে ঝালুরচর বাজার পর্যন্ত ১১কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন কাজের অনিয়মের এলাকাবাসীর অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ জামালপুরের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করেন। তিনি কাজের অনিময় এবং টেন্ডার অনুয়ায়ি কাজের মান বজায় রাখার অনুরোধ করেন। এই খবরে বাহাদুরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কাজের ঠিকাদার সাকিরুজ্জামান রাখাল উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্যেসহ আগামী ১৩ নভেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পরে তাকে দেওয়ানগঞ্জে ডুকতে না দেয়ার হুমকি দেন। এ খবর পেয়ে সাংসদ অনুসারিরা উত্তেজিত হয়ে উঠে।

সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের অনুসারি দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র শেখ মোহাম্মদ নুরুন্নবী বলেন, চেয়ারম্যান সস্ত্রাসী কায়দায় অবৈধ উপায়ে কালো টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছেন। সেই টাকার জোরে তিনি (চেয়ারম্যান) এমপিসহ অনেক নেতার সঙ্গে অসদাচরণ করেন। সম্প্রতি ওই চেয়ারম্যান ১১ কোটি টাকার একটি রাস্তার কাজ পান। নিয়ম-নীতি না মেনে নিন্মমানের কাজ করছেন । বিষয়টি স্থানীয় লোকজন এমপিকে জানান। এমপি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে কাজ ভালোভাবে তদারকির করতে বলেন। এই কারণে ওই চেয়ারম্যান ক্ষেপে যান এবং এমপিকে নিয়ে নানা রকম বিরূপ মন্তব্য করেন। এমপিকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেন। এমপির বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করায় দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ ওই চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল।

ইউপি চেয়ারম্যান মো.শাকিরুজ্জামান বলেন, এমপিকে নিয়ে আমি কখনোই বিরূপ মন্তব্য করেনি। স্থানীয় রাজনীতিতে কেন্দ্র করে তাঁরা আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছেন। গত রাতে এমপির লোকজন আমার ব্যক্তিগত কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে ভাজে ভাষায় গালাগালি করেছে। আমার একজন লোককে মারধর করেছেন। পুলিশ আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী মো. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি আমি অবগত না। নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের কাছে করতে পারে। দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার সামনে থেকে ঝালুরচর বাজার পর্যন্ত সাড়ে দশ কিলোমিটার রাস্তার কার্পেটিংয়ের কাজের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যে সকল মেশিনপত্র নিয়ে এসেছে সেই সকল মেশিনপত্রে ত্রুটি আছে। নির্বাহী প্রকৌশলী ও কাজের প্রকল্প পরিচালক স্যার এসে দেখার পরে কাজ শুরু করা হবে।
জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকিবুল হাসান বলেন, বাহাদুরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.শাকিরুজ্জামান রাখাল গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ঢোকলে একটি পক্ষ সেখানে অবস্থান নেন। খবর পেয়ে ওই চেয়ারম্যানের অনুসারীরাও অবস্থান নেন। পুলিশ গিয়ে উভয় পক্ষকে সেখান থেকে সরিয়ে দেন। তবে পুলিশ ভূমিকার কারণে তেমন কিছু হয়নি। রাস্তা থেকে কিছু লাঠিসোটা এবং দেশীয় অস্ত্র জব্দ করে থানায় রাখা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *