earth-like-planets_40332_1487819997_2
শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭

বিশেষ প্রতিনিধি ঃ
সৌরজগতে পৃথিবীর আকৃতির সাতটি গ্রহের সন্ধান
পেয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। গ্রহগুলো
সৌরজগতের নিকটবর্তী একটি নক্ষত্রকে ঘিরে
ঘূর্ণায়মান।
বিজ্ঞানীদের নতুন এ আবিষ্কার বুধবার জার্নাল
ন্যাচারে প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি ওয়াশিংটনে
নাসার সদরদফতরেও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে
ঘোষণা দেয়া হয়। খবর বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ানের।
বিজ্ঞানীরা নতুন আবিষ্কৃত গ্রহ সাতটিকে
জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিরল ঘটনা উল্লেখ
করছেন। কারণ, গ্রহগুলোর আকৃতি পৃথিবীর মতো এবং
সেগুলোতে পানির অস্তিত্ব থাকার ফলে আবহাওয়া
প্রাণের জন্য উপযুক্ত হতে পারে বলে ধারণা করছেন।
গবেষকদের মতে, সাতটি গ্রহের পৃষ্ঠতে তরল পানির
স্তর থাকতে পারে। তবে সাতটির মধ্যে তিনটি গ্রহ
প্রাণের বা বসবাসের উপযুক্ত হতে পারে।
জার্নাল ন্যাচারে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, নাসার
স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপ ও বেশ কয়েকটি
ভূমিভিত্তিক পর্যালোচক সংস্থা এসব গ্রহের সন্ধান
পেয়েছে। এগুলো পৃথিবী থেকে ৪০ আলোকবর্ষ দূরে
একটি নক্ষত্রকে ঘিরে আবর্তন করছে।
এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেয়া বেলজিয়ামের
ইউনিভার্সিটি অব লিজের জ্যোতির্বিদ মাইকেল
গলোন বলেন, ‘এবারই প্রথমবারের মতো একটি নক্ষত্র
ঘিরে এ ধরনের এতোগুলো গ্রহ পাওয়া গেছে।’
তিনি বলেন, ‘গ্রহগুলো একে অপরের অনেক কাছাকাছি
এবং নক্ষত্রেরও খুব নিকটে, যা বৃহস্পতি গ্রহের
চারপাশে চাঁদের কথা মনে করিয়ে
দেয়।’
অতি শীতল ক্ষুদ্রাকৃতির নক্ষত্র
টিআরএপিপিআইএসটি-১
তিনি আরও বলেন, ‘এখনো নক্ষত্রটি অনেক ছোট এবং
শীতল সাতটি গ্রহই নাতিশীতোষ্ণ, যার অর্থ গৃহপৃষ্ঠে
তরল পানি রয়েছে এবং সম্ভবত প্রাণেরও অস্তিত্ব
রয়েছে।’
অতি শীতল ক্ষুদ্রাকৃতির ওই নক্ষত্রের নাম দেয়া
হয়েছে টিআরএপিপিআইএসটি-১। বিজ্ঞানীরা বলছেন,
এই নক্ষত্রকে ঘিরে আবর্তিত গ্রহগুলো শক্ত গঠনের।
সেগুলো বৃহস্পতির মতো গ্যাসীয় নয় বরং শিলা দ্বারা
গঠিত হতে পারে।
টিআরএপিপিআইএসটি-১ ই, এফ ও জি নামের তিনটি
গ্রহ তথাকথিত ‘বাসযোগ্য এলাকায়’ এবং সেগুলোতে
মহাসাগরও থাকতে পারে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের।
এখানে বাসযোগ্য বলতে কোনো নক্ষত্রের চারপাশে
ঘূর্ণায়মান গ্রহদের অবস্থানের এমন একটি এলাকা
বোঝানো হয়, যে অবস্থানে থাকলে ওই গ্রহ বা গ্রহ
পৃষ্ঠে তরল পানি থাকার সম্ভাবনা থাকে।
গবেষকদের বিশ্বাস, টিআরএপিপিআইএসটি-১ এফ
প্রাণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। এটা পৃথিবীর চেয়ে
কিছুটা শীতল। তবে সঠিক অ্যাটমোসফিয়ার ও
পর্যাপ্ত গ্রিনহাউজ গ্যাসসহ এটা প্রাণের জন্য উপযুক্ত
হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা জানান, টেলিস্কোপের সাহায্যে এসব
গ্রহের বায়ুমণ্ডলীয় পরিস্থিতি গবেষণা করা যাবে।
সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব বার্ন’র অধ্যাপক
ব্রিস-অলিভিয়ার ডেমোরি বলছেন, এসব গ্রহের
কোনোটির ওজন স্তরে অণূর অস্তিত্ব থাকলে তা
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে চিহ্নিত করা
সম্ভব হবে। এর অর্থ দাঁড়াবে ওই গ্রহে প্রাণের
অস্তিত্ব রয়েছে।
সহগবেষক ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের
জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমাউরি ট্রিউড বলেন, ‘আমি
মনে করি, আর কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি না
তা খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
একটি ধাপ এগিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এর আগে কখনো
আমাদের এমন কোনো গ্রহ আবিষ্কার ছিল না,
যেখানে প্রাণ আছে কি না তা খুঁজে দেখার মতো।
এখানে যদি কোনো প্রাণের অস্তিত্ব থাকে এবং
গ্যাস নিঃসরণ করে, যেমনটি আমরা পৃথিবীতে করি,
তাহলে আমরা তা জানব।’
তবে আমাউরি ট্রিউড জানান, এটা বলাই সঠিক হবে,
আমরা খুব বেশি জানি না। বাসযোগ্য হওয়ার অনেক
কিছুই পাল্টে যেতে পারে। এজন্য সবার আগে
আমাদের এগুলো পর্যালোচনা করা দরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *