কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (চলতি দায়িত্ব) মোঃ আব্দুল হাই এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার কালিরহাটের জনৈক আব্দুল খালেকের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের নির্দেশে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুর রশিদ, উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের ভেটেরিনারি সার্জন মাহমুদুল হাসান ও সহকারী প্রোগ্রামার আজমল আবসার।

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হাই (চলতি দায়িত্বে) উপজেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে যোগদান করে নিজেকে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা অফিসার হিসেবে দাপট দেখিয়ে মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজে অনিয়মের রাজত্ব করেন। বিভিন্ন নিয়োগ ও দাপ্তরিক কাজে স্বার্থ ছাড়া কোন কাজ করে না। তার অনিয়মের অত্যাচারে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা অতিষ্ঠ। তার বাড়ি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা
উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন নিয়োগে আগাম লক্ষাধিক টাকা ছাড়া নিয়োগ পরীক্ষায় উপস্থিত থাকেন না। নিয়োগ ও বিভিন্ন কাজে অনিয়ম করে টাকার পাহাড় গড়েন। রাতারাতি প্রিয় শহর রংপুরে ফ্লাড বাড়ি করে। তিনি কর্মস্থলে না থেকে রংপুর থেকে অফিস করে এবং স্ত্রী- সন্তানের নাম ও বেনামে ব্যাংকের অর্থ জমা রয়েছে। নিয়মিত অফিসে পাওয়া যায় না। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বাইরে অবস্থান করেন।

আরো এক অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলা সদরের ফুলবাড়ী জছিমিয়া মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে (সমাজ বিজ্ঞান) সহকারি শিক্ষিকা আশরাফিয়া জাহান, সুজনের কুটি দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক কম্পিউটার মোছাম্মদ নাসরিন সুলতানা এবং কাশিপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক আসমা খাতুনের নিবন্ধন সনদ যাচাইয়ে ২০১৬সালের ১০অক্টোবর এনটিরসি তদন্ত দিলে তিনি তদন্ত না করে চুক্তিভিত্তিক মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে ধামাচাপা দেয়। সম্প্রতি এনটিআরসির এক প্রতিবেদনে ওই তিন শিক্ষকের ভুয়া সনদের বিষয়টি জনসম্মুক্ষে আসে।

এছাড়াও তিনি দাসিয়ারছড়া শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসার ভূতপূর্ব সুপারিনটেনডেন্ট (সুপার) আমিনুল ইসলামকে ওই মাদ্রাসায় পুনরায় সুপার হিসেবে পুনর্বহালের চেষ্টা করে এবং তার পক্ষ অবলম্বন করেন। অথচ আমিনুল মধ্য কাশিপুর দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী শিক্ষক থাকা অবস্থায় দাসিয়ারছড়া শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসার সুপার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একই ব্যক্তি দুই প্রতিষ্ঠান চাকরি এবং নানা অনিয়ম এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠলে তিনি পদত্যাগ করে পূর্বের প্রতিষ্ঠানে ফিরে যায়। সম্প্রতি শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসা সরকারী হিসেবে ঘোষণা হলে তিনি স্থানীয় কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (চলতি দায়িত্ব) কে ম্যানেজ করে পুনরায় ওই প্রতিষ্ঠানের সুপার হিসেবে কর্তৃত্ব ধরে রাখতে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছেন।

অভিযোগকারী আব্দুল খালেকের সাথে ফোনে কথা হলে তিনি জানান, শারীরিক অসুস্থতা ও করোনাকালীন লকডাউনের কারনে তিনি উপস্থিত হতে পারেন নি। তবে প্রমাণাদি সংযুক্ত করে একটি লিখিত আবেদন পোস্ট অফিসের মাধ্যমে রেজিঃ করে তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা কৃষি অফিসার বরাবর প্রেরণ করেছেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (চলতি দায়িত্ব) মোঃ আব্দুল হাই বলেন, তদন্ত কার্যক্রম চলমান আছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করতে পারবো না।

তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা কৃষি অফিসার মাহবুবুর রশীদ জানান, তদন্ত চলমান রয়েছে। বাদী অনুপস্থিত রয়েছেন।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন দাস বলেন, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির মাধ্যমে তদন্ত চলছে।

কুড়িগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শামছুল আলম বলেন, অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে উধ্বতর্ন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি অভিযোগ তদন্তের জন্য পেয়েছি। ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে তদন্ত চলছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিবের একান্ত সচিব কাজী শাহজাহান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তদন্ত চলছে। প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *