শাহানারা শারমিন

শৈশব হচ্ছে শিশুর যত্ন ও বেড়ে উঠার গুরুত্বপূর্ণ সময়।এ সময় শিশুদের প্রতি খেয়াল রাখা খুব প্রয়োজন। শিশু জন্মের প্রথম আট বছর বেড়ে উঠার সময় শারিরীক ও মানসিক বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে। শৈশব কথাটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মিষ্টি মধুর কিছু স্মৃতি। আমরা যখন ছোট ছিলাম আমাদের শৈশব কতইনা মধুময় ছিল।মনে পড়ে যায় সেসব বন্ধু বান্ধবের কথা,যাদের সাথে আমরা দল বেঁধে মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়াতাম।ভোরবেলা শিউলি বকুল কুড়িয়ে মালা তৈরি করতাম, ভর দুপুরে গাছে উঠে ফল পেড়ে খেতাম,পুকুরে সাঁতার কাটতে কাটতে গামছা দিয়ে মাছ ধরতাম,বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলতাম,কাগজের নৌকা বানিয়ে পানিতে ভেসে দিতাম।আবার স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে আসার সময় বৃষ্টি এলে কলা অথবা কচু পাতায় ছাতা বানিয়ে বাড়ি ফিরতাম।এরুপ কত স্মৃতি মিশে আছে আমাদের শৈশবের সাথে।আমরা যে এসব খেলাধুলা শুধু ছুটির দিনেই করেছি তা নয়,স্কুল চলাকালীন দিনেও করেছি। আর ছুটির দিন হলে তো কথায় নেই সকালে নাস্তা করে খেলতে ছুটতাম সারাদিন খুব মজা করে লুকোচুরি বউচি,চড়ুইভাতি খেলে কাদা মাটিতে শরীর একাকার হয়ে গেলে মা আমাদের বকুনি দিয়ে সেসব পরিস্কার করে দিতেন। তবে শৈশব তার জায়গাতে থাকলেও বদলে গিয়েছে তার চারপাশ।যার ভুক্তভোগী হচ্ছে আমাদের কোমলমতি শিশুরা।এখন শৈশব মানেই হচ্ছে মোটা মোটা বই কাঁধে নিয়ে স্কুলে যাওয়া বাসায় এসে হাউস টিউটরের কাছে পড়া, আছে স্কুল কোচিং, নাচ, গান, অংকন আরও কত কিছু। ছুটির দিনেও রেহাই নেই তাদের,এখনকার শিশুদের শৈশব আটকে গিয়েছে মায়েদের শাসন অনুশাসন ও একগাদা বইপুস্তকের বেড়াজালে।সন্তানের লেখাপড়া নিয়ে বাবা মায়ের অতিরিক্ত মাথা ব্যথা সন্তানের মানসিক চাপের সৃষ্টি করছে।বাবা মা অন্য বাচ্চাদের সাথে নিজেদের বাচ্চার তুলনা করে, তোমার অমুক বন্ধু পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে তুমি কেন পারবে না,তোমার ঐ বন্ধু একই সাথে এতকিছু করছে তুমি কেন পারবে না।সে কম কথা বলে তুমি কেন সারাক্ষণ বকবক করো।সে এতোগুলা ভাত খায় তুমি কেন খেতে পারো না।সে খেলাধুলা করে প্রাইজ পেলে তুমি কেন পাওনা। এসব না না শুনতে শুনতে বাচ্চাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তারা সব সময় হীনমন্যতায় ভোগে। বাচ্চাদের সুশিক্ষিত করতে হবে তাই তাদের বাচ্চাদের সব সময় চাপের মধ্যে রাখে।ক্রমেই শিশুরা চার দেওয়ালের মাঝে বন্দী হয়ে পড়ছে।চার দেওয়ালে বন্দী থাকা শিশুরা কারো সাথে মেলামেশা করার সুযোগ পায়না বলে তাদের তেমন একটা বন্ধু বান্ধব থাকেনা। বন্দী শিশুরা নৈতিকতা মূল্যবোধ আচার আচরণ সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা পায় না।
সন্তানকে সব সময় ঘর বন্দী করে না রেখে তাদের সপ্তাহে অন্তত একটা দিন বাইরে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ দিন।প্রকৃতির ছোঁয়া না পেলে শিশুদের মধ্যে সৃজনশীলতা সৃষ্টি হবে না।আমরা যেভাবে বড় হয়েছি আমাদের শিশুদের সেরকম শৈশব দিতে পারবো না ঠিকই তবে ওদের যদি মাঝে মাঝে বিভিন্ন পালা-পার্বণে বেড়াতে নিয়ে যাই,সবুজ ঘাসে পা দিয়ে হাঁটার সুযোগ দেই,কাদামাটি নিয়ে খেলার সুযোগ দেই, বৃষ্টিতে ভিজতে দেই তাদের শৈশব কিছুটা হলে-ও আনন্দময় হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *