সংবাদদাতা, কলকাতা:

কলকাতার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে বিশাল সমাবেশের ডাক দিল বিভিন্ন ইমাম ও মুসলিম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শরীয়তের উপরে হস্তক্ষেপ ও বিভিন্ন দাবী জানাতে এই প্রতিবাদ সভার আয়োজন।
তালাকের মতো স্পর্শকাতর বিষয়কে কেন্দ্র করে শরীয়তের উপরে হস্তক্ষেপ করার জন্য মোদী সরকার যে অর্ডিন্যান্স জারি করেছে তার বিরুদ্ধে রাজ্যের বিভিন্ন ইমাম ও মুসলিম সংগঠন আগামী ৩ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার কলকাতায় মহা সমাবেশ করে যোগ্য জবাব দেওয়ার জোরাল প্রস্তুতি নিয়েছে।

বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃস্থানীয়দের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, মোদী সরকারের অগণতান্ত্রিক পন্থায় ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জানাতে আজ শুক্রবার রাজ্যের প্রায় সমস্ত মসজিদে জনসাধারণকে মোদী সরকারের ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি সম্পর্কে অবহিত করা হয়।

আগামী ৩ অক্টোবর বুধবার কলকাতায় সমাবেশ করে এর বিরুদ্ধে যোগ্য জবাব দেওয়ার আয়োজন সফল করতে চলছে সর্বত্র আলোচনা।

মহা সমাবেশ থেকে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের নানা সমস্যা, ইমাম ভাতা বৃদ্ধির দাবী, ওয়াকফ সম্পত্তি জবর দখল মুক্ত করা, মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করা, মাদ্রাসা গুলির সাহায্য প্রদান করতে হবে এবং পরিদর্শন করে আন এডেড মাদ্রাসা গুলির অনুমোদন দেওয়ার আবেদন সহ বিভিন্ন দাবীতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হবে।
জানালেন, মহম্মদ কামরুজ্জামান, রাজ্য সম্পাদক, সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন ও সর্বভারতীয় “নবচেতনা”র আহ্বায়ক ফারুক আহমেদ।

চলতি বছরের ৩ অক্টোবর ভারতের কলকাতার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে বিশাল সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন ইমাম ও মুসলিম সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

ওই সমাবেশ থেকে মমতা ব্যানার্জি সরকারের কাছে একগুচ্ছ দাবি জানানো হবে বলে জানান সভার একজন আয়োজক।

‘ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ভাতা যথাক্রমে আড়াই হাজার এবং দেড় হাজার টাকা। এই ভাতা বাড়ানোর দরকার আছে। ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বাসস্থান তৈরী করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি’, বলেছেন, ফারুক আহমেদ সর্বভারতীয় নবচেতনার আহ্বায়ক। তিনি ওই সমাবেশের একজন অন্যতম বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

হায়দরাবাদে ইমাম সাহেবদের মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি। ওই দিন মাদ্রাসাগুলোতে সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করা, আরো সাহায্য প্রদান করা এবং আন এডেড মাদ্রাসা গুলোর অনুমোদন দেওয়ার আবেদনসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সমাবেশের রাজনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ ভারতের লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আসছে। মমতা ব্যানার্জির কাছে মুসলমান ভোট খুব জরুরী।

কারণ পশ্চিমবঙ্গের ৩০ শতাংশ ভোটার মুসলমান। বিজেপি বিরোধিতা করার কারণে মমতা মুসলিম সম্প্রদায়ের বিশ্বাস অর্জন করেছেন এবং ২০১১ সালের পর থেকে একের পর এক নির্বাচনে তার সাফল্যর বড় কারণ মুসলমান ভোট।

‘গ্রামের দিকে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের কথার অনেক গুরুত্ব। মমতা নিশ্চয়ই এই সমাবেশ থেকে ওঠা দাবিগুলো পূরণের চেষ্টা করবেন’ বলে জানান একজন রাজনৈতিক পর্যবক্ষেক।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু মুসলমান ভোটের গুরুত্ব অপরিসীম, তাই হয়ত নির্বাচনের আগে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এই সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে।

ফারুক আহমেদ আরও বলেন, সামনে ২০১৯ লোকসভা ভোট বাংলা থেকে যোগ্য ১৪ জন মুসলিমকে লোকসভার প্রার্থী করতে হবে তাদের জিতিয়ে সাংসদ করার দায়িত্ব বাংলার নাগরিক সমাজ নেবেন। আর ২০২১ বিধানসভাতেও যোগ্য ৯৫ জন মুসলিমকে প্রার্থী করতে হবে। যোগ্য মুসলিম বিধায়কদেরকে গুরুত্বপূর্ণ দফতরে মন্ত্রী করে দায়িত্ব দিতে হবে। এর জরালো দবী তুলছি।
বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও নবচেতনার আহ্বায়ক ফারুক আহমেদ বললেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার সহ সমস্ত রাজনৈতিক দল অনগ্রসর মানুষের কল্যাণে এগিয়ে এসে সঠিক পদক্ষেপ নিক। বাংলার জনপ্রতিনিধি হিসেবে মুসলিমদের সর্বক্ষেত্রে সম পলিসির বাস্তব রূপ দিয়ে সম সুযোগ দিক। রাজ্যের সরকার পরিচালিত মন্ত্রীসভায়, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত দফতরেই মুসলিম প্রতিনিধিদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদে না দিয়ে চরম বঞ্চিত করছে মমতা সরকার। এর অবসান চাই। আজ পর্যন্ত কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম অধ্যাপককে কেন উপাচার্য করা হল না? ব্যতিক্রম আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া।

ডিজি বা পুলিশ কমিশনার করা হয়নি কেন, এবার ডিজি ও পুলিশ কমিশনার করা হোক মুসলিমদের মধ্য থেকে যোগ্য পুলিশ আধিকারিকদেরকে। রাজ্যের ২৩ জেলাতে কোনও মুসলিম আধিকারিক এসপি বা ডিএম নেই। শুধমাত্র ঝাড়গ্রামের ডিএম আয়শা রানি। রাজ্যের প্রশাসনে এবং সরকারের কমান্ডিং পোস্টে কোনও মুসলিম নেই কেন? মমতা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে মুসলিমদের অবদান সব থেকে বেশি তবু তাদের কেন গুরুত্ব নেই। এই চরম বঞ্চনার অবসান চাই।
আগামী ২০২১ বিধানসভা ভোটে ৯৫ জন যোগ্য মুসলিমদেরকে বিধায়কের টিকিট দেওয়ারও দাবী জানাচ্ছি।
কলকাতা শহরে আরও ১৯ টি মুসলিম গার্লস ও বয়েজ হোস্টেল গড়ে তুলতে মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্যোগ নিতে হবে। সংখ্যালঘু দফতর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের হাতে রেখেছেন। চারিদিকে আওয়াজ উঠেছে সংখ্যালঘু কল্যাণে বাংলার মমতা সরকার চরম ভাবেই ব্যর্থ হয়েছে। যার প্রভাব পড়বে আগামী লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে। এখনও সময় আছে মমতা সরকার সজাগ না হলে আগামীতে বামাদের মতো হাল হবে এই সরকারের। তাই এখনও সমায় আছে সকলের জন্য সম পলিসি নিয়ে উন্নয়ন করার।

সম সুযোগ ও সম পলিসির বস্তব রূপান করতে হবে দিদিকে। ৮২ টির মতো স্বশাসিত সংস্থার কমান্ডিং পোস্টে কোনও মুসলিম নেই এই সরকারের আমলে আমরা তা ভুলে যায়নি। ৭ টি পুলিশ কমিশনারেট আছে কোথাও মুসলিমকে পুলিশ কমিশনার করা হয়নি।
মমতা সরাকারের আমলে সব থেকে মুসলিমরাই বঞ্চিত হচ্ছে সর্বত্র। চাকরি পাওয়া থেকে সরকার পরিচালিত সমস্ত দফতর ও প্রশাসনে এখন দেখছি এই সরকারের আমলে সব থেকে মুসলিমরা পরিত্যক্ত।
তবু আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, মুসলিমদের জন্য তিনি সব করে দিয়েছেন।
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের দিদিকে বলছি, একটু সজাগ হয়ে প্রকৃত কল্যাণকর কাজ করে মানুষের মন জয় করুন। নইলে ভোটব্যাঙ্ক ঘুরিয়ে দিতে বেশি সময় লাগবে না। ওবিসি-এ এবং ওবিসি-বি সকল চাকরি প্রার্থীদের বঞ্চিত না করে প্রকৃত যোগ্যদের চাকরি দিন।
বিজেপি জুজু দেখিয়ে সচেতন মুসলমানদের আর বোকা ও লেঠেল বাহিনি বানানো যাবে না এটা মনে রাখতে হবে। আমরা বাংলাতে শান্তিতে থাকতে চাই তাই বিজেপিকে একটাও ভোট দেব না। বিভেদকামী শক্তিকে রুখতে আমরা বদ্ধপরিকর। ভোট দিয়ে দিদিকেই প্রধানমন্ত্রী করতে চাই। তার জন্য চাইছি দিদির একটু সুদৃষ্টি আমাদের প্রতি।”

“মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী আপনি উৎসব পালন করার জন্য পুজো কমিটি গুলিকে অনুদান দিন সমর্থন না করলেও বিরোধিতা করব না। কিন্তু ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ক্ষুধার্ত রাখবেন এটা কাম্য নয়। আপনি বলেছিলেন যদি একটা রুটি হয় অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করে খাব। আপনি বোধহয় সেই বক্তব্য ভুলে যাচ্ছেন। তাই আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য আগামী ৩ অক্টোবর ২০১৮ বুধবার বেলা ১২ টায় ধর্মতলার রানি রাসমণি এভিনিউতে মহাসমাবেশ করে আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।” বলছিলেন, মোহাম্মদ কামরুজ্জামান সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *