সোনিয়া তাসনিম কলকাতা

হাড় কাঁপানো শীতে ভাপ তোলা পিঠের স্বাদ, কম্বলের ওমে ওম পোহানের মজা তো বাপু সকলেরই জানা৷ আর সেই সাথে খেজুর রসের মিঠে কড়া স্বাদ মিলে গেলে তো কথাই নেই কোন৷ কাঁচা রসে মুখ ভরে তোলার সেই লালসায় হাবুডুবু খাননি এমন বেরসিক বাঙালি বাপু খুঁজে পাওয়া দায়৷ হিম শীতে আলতো রোদে তাপানো উঠোনে বসে এক গ্লাস খেজুর রসে যে চুমুক তুলেননি সে মশাই শীতের আমেজটা আর কী বা বুঝল? তা এই খেজুর রসে সাঁতরে বেরাবার সাথে যদি এই রসলীলাকে আমেজে ডুবিয়ে জমিয়ে দেওয়া হয় তাহলে ভাবুন তো ব্যাপারটা কী হবে একবার৷ চমকে গেলেন?

শুরুটা সেই ২০২০ এ৷ অনন্য এই ভিন্নধর্মী আয়োজন আসরে সেবার পাখা মুদে বসেছিল সুইজারল্যান্ড, সাউথ কোরিয়া, নেপাল, বাংলাদেশ সহ ভারতের নানা সাংস্কৃতিক মনা রসিকজনেরা৷ বছর ঘুরে মধুমক্ষিকার এই সরোগোল ফের জমবে ২০২৪ এর ১৯ এবং ২০ জানুয়ারি ডায়মন্ড হারবার নদীর ধারে পুরাতন কেল্লাতে৷ নিউইয়র্ক থেকে অন্তর্জালের কল্যাণে এতে প্রাণের সঞ্চার করবেন কবি জহুরুল ইসলাম৷ সঙ্গে থাকছে কানাডা, চেচ রিপাবলিক, সুইজারল্যান্ড, সাউথ কোরিয়া, নেপাল, বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের কলাকুশলি রসিকজনেরা৷

বস্তুত৷ বাঙালি মানেই ভোজন রসিক। আর এই রসিকতাকে ঋতু বৈচিত্র্যে সাজিয়ে নিতেও বাঙালি জাতি অনন্য৷ শীতকালে খেজুর রসের আমেজের মিষ্টতা আমাদের খাদ্য সংস্কৃতির এক মিষ্টি খাদ্য ঐতিহ্যের অনুষঙ্গ।

খেজুর রসের মিঠে আমেজকে নিয়ে একসময় আমাদের গ্রামীণ সমাজে সৃজিত হয়েছে নানা লোকগাঁথা, শিউলি বা গাছিয়াদের নিয়ে খোদিত হয়েছে বাহারি সব চিত্রকর্ম, যেগুলো আজ ধরতে গেলে বিস্মৃতপ্রায় কোন রূপকথা৷ অনন্য এই মিঠেকড়া আমেজের সাথে জুড়ে দুবাংলার আত্মিক সম্পর্কের মিষ্টতা। বাংলার এই চিরায়িত খাদ্য সংস্কৃতির ধারাকে মিঠে অনুষঙ্গের মিঠে স্মৃতির ধারক করে নিতে তাই আয়োজন৷ সহজ কথায় বলতে গেলে খেজুরের রসের সাথে সাহিত্য রসের ভান্ডারকে জুড়ে নিতেই এমন অসাধারণ উদ্যোগ৷

কবি অরুন কুমার চক্রবর্তী, সুরোজিত, উমেশ দার উদ্যোগেই জন্ম “রসমতী” নামক এই মিঠে আয়োজনের। এবছর পটচিত্র প্রশিক্ষণ শিবিরটি বিশেষ আয়োজন হতে চলেছে কোন সন্দেহ নেই৷ ভেষজ রঙে ক্যানভাস কী করে রাঙাতে হয় তারই জাদু নিয়ে হাজির থাকছেন পটচিত্র শিল্পী বাপী চিত্রকর৷ থাকছে লাল পাহাড়ি গানের কবি অরুণ চক্রবর্তী মহাশয়কে নিয়ে এক বিশেষ অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের বিশিষ্ট রন্ধনশিল্পী আঞ্জুমান সেতু এবং ভারতের পাঞ্চালি দত্ত হাজির হচ্ছেন হেঁসেল ঘরের গোপন সূত্র নিয়ে৷

ডায়মন্ড হারবার প্রেস ক্লাবের কবি সাকিল আহমেদ পরিচালনা করবেন কুড়ির অধিক কবি নিয়ে কবিতা পার্বণে উপস্থিত থাকবেন কবি ও উদার আকাশ সম্পাদক ফারুক আহমেদ আর ভাস্কর্য শিল্পী গৌরাগ্য মহাশয় মৃত্তিকা তুলির কারিশমায় পরখে নেবেন তিনটি গ্রুপের শ্বাসরুদ্ধকর প্রতিযোগিতা। আর এই গোটা অনুষ্ঠানের কো- অর্ডিনেটের দায়িত্বে অ্যানিমেশান শিল্পী কল্যাণ দাস ও বিশিষ্ট প্রকৌশলী সঙ্কর সরকার৷

আর হ্যাঁ, এই এলাহি কান্ডের রসমতী শিল্পকলা উৎসবের ও সংগ্রামপুরের সংগ্রামী শিল্পী ভাবুক কর্ণধার হলেন, জনাব সারফুদ্দিন আহমেদ।

তা সে যাই হোক, সমস্ত আয়োজন শেষে পুরোন কেল্লার খেজুর বাগানের উন্মুক্ত আঙিনা সহসাই গরম হতে চলেছে নলেন গুড়, মোয়া, গুড়ের রসগোল্লা, জয়নগরের মোয়ার সাথে। আর সঙ্গে? আর সঙ্গে ছবি আঁকা থেকে আরাম্ভ করে নাচ গান, কৌতুক কবিতা, আবৃত্তি ঝড় তো রয়েছেই৷ আরে বাপু, যেখানে মিঠে রসের জোয়ার হৃদয়ের সেতারে অনুরণ জাগবে সেথায় ছন্দ আর লয় থাকবে না তা কী হয়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *