নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
রাজশাহী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের ভেতরের পরিবেশ নষ্ট। ফাইল পাশের নামে ঘুষ গ্রহণ ও সেই টাকা’র ভাগাভাগিতে অফিসের ভিতরেই মারামারি ঘটনা ঘটে। সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাভূক্ত দপ্তরটি ভিতরেই মারামারিতে দুই কর্মচারী আহত হয়। তবে বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে ধামাচাপা দেন উপ-পরিচালক মাহমুদা পারভীন।
গত বছর ৮ই নভেম্বর রাজশাহী বিমানচত্ত্বরের পাশে অবস্থিত জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের ভিতরেই ঘুষের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন দুই কর্মচারী। ঐ দুই কর্মচারী হলেন, কম্পিউটার অপারেটর শরিফুল ইসলাম ও উপ-পরিচালকের গাড়ি’র ড্রাইভার জহুরুল ইসলাম।
ঘটনাসুত্রে জানা যায়, পরিবেশ অধিদপ্তরে অনুমোদন নিতে আসা ভুক্তভোগীদের একটি ফাইল পাস করা নিয়ে কথা-কাটাকাটি একপর্যায়ে তুমুল মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। কম্পিউটার অপারেটর শরিফুলকে উপ-পরিচালকের নামে একটি ফাইল পাস করতে বলেন জহুরুল। এ সময় কম্পিউটার অপারেটর শরিফুল বলেন, ফাইল সংশোধন করতে হবে। তখন ড্রাইভার জহুরুল বলেন, ম্যাডাম বলেছে সংশোধন না করেই ফাইল ছেড়ে দিতে হবে। একপর্যায়ে ফাইল পাসের টাকা কম বেশি নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা৷ এরপর সিসিটিভি ক্যামেরায় বাহিরে অন্য একটি কক্ষে তারা সেই ফাইল বাবদ ঘুষের টাকা ভাগাভাগি করতে গিয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। সেই মারামারি”র ভিডিও ফুটেজ ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
একটি বিশ্বাস্ত সুত্র নিশ্চিত করেন, উপ-পরিচালক মাহমুদা পারভীনের নানা অনিয়ম দুর্নীতি’র ফাইলপত্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঘুষের টাকা তুলে থাকেন ড্রাইভার জহুরুল ইসলাম। এরই ধারাবাহিকতায় উক্ত দিনে ম্যাডামের নামেই ফাইলের ভুল সংশোধন না করেই ফাইল ছেড়ে দিতে বলেন। সেই ফাইল পাস বাবদ মোটা অংকের উৎকোচ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ আছে, দপ্তরটিতে ঠিকমত অফিস করেন না উপ-পরিচালক মাহমুদা পারভীন। অফিসে গেলে অন্যান্য কর্মচারীরা বলেন, ম্যাডাম বিভাগীয় কমিশনার অফিসে মিটিং এ আছেন। প্রায় কয়েকদিন গিয়ে প্রতিবেদক খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তিনি অফিসে আসেন কম। অফিস না করলেও তিনি (উপ-পরিচালক) ড্রাইভার জহুরুল ইসলামকে দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মাসিক মাসোহারা নিয়ে থাকেন।
অফিসে মারামারি’র বিষয় জানতে ড্রাইভার জহুরুল ইসলামকে ফোন দিলে তিনি বলেন, দুইজনের মধ্যে সামান্য কথা-কাটাকাটি হয়েছে, মারামারি নয়। তবে ভিডিও ফুটেজ এর কথা বলতেই তিনি সব স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমাকে বেশি মেরেছে শরিফুল। অফিসের টেবিলে ফেলে আমাকে প্রচুর মারা হয়েছে। তবে ঘুষসহ অন্যান্য বিষয় অস্বীকার করেন তিনি।
কম্পিউটার অপারেটর শরিফুল বলেন, আমার সঙ্গে মারামারি’র ঘটনা ঘটেনি। তবে কথা কাটাকাটি হয়েছে। কি বিষয়ে কথা-কাটাকাটি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি ফাইল সংক্রান্ত বিষয়ে। এর বাহিরে আমি আর কিছু বলতে পারবো না।
বেশ কিছুদিন রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তর অফিসে গিয়ে উপ-পরিচালক মাহমুদা পারভীনকে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফোন রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সহকারী পরিচালক কবির হোসেন বলেন, অফিসে বসার ব্যাপারে দুইজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে দুইজনকে মুচলেকা নিয়ে সর্তক করা হয়েছে। ফাইল পাসকে কেন্দ্র করে ঘটনার সুত্রপাত নয়। অন্যান্য বিষয় অস্বীকার করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *