জামালপুর প্রতিনিধি ॥
৫৪ বছর বয়সে মুক্তিযোদ্ধার সকল সুবিধা পেলেও, ৮৬ বছর বয়সে মুক্তিযোদ্ধা হয়েও পায়নি সনদ। বলছি জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের সাউনিয়া গ্রামের মৃত নাছির উদ্দীনের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহা আলম (৫৪) ও মেলান্দহের মহিরামকুল বাগবাড়ী মো. মোতালেব (৮৬)’র কথা। এমন তথ্য পাওয়া গেছে জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবরে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কি না যাচাই-বাছাইয়ের অভিযোগ ও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য পৃথক দুটি আবেদন থেকে।

ইউএনও অফিসের পৃথক দুটি আবেদন সুত্রে জানা যায়, একদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাহা আলমের বয়স জাতীয় পরিচয়পত্র ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ এর ভোটার তালিকা অনুযায়ী প্রায় ৫৪ বছর। বাঙালির স্বাধীনতা জন্য সংগঠিত মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল প্রায় ৫৩ বছর। জাতীয় পরিচয় পত্রের বয়স (০৬-১২-১৯৭০) অনুযায়ী ৩ মাস ২০ দিন বয়সেই মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের সাউনিয়া গ্রামের বাসিন্দা আরাফাত হোসেন ওরফে মো. শাহা আলম। সে ওই গ্রামের মৃত নাছির উদ্দিনের ছোট ছেলে। জাতীয় পরিচয়পত্র ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ এর ভোটার তালিকা অনুযায়ী শাহা আলমের বড়ভাই মো. শরাফত আলীর জন্ম তারিখ: ০১-০১-১৯৬৩ইং। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের স্বার্থে এবং মো. শাহা আলমের পরিচয় সকলের সামনে উন্মোচন করতে এমন তথ্য সম্মিলিত এক অভিযোগ জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং জামালপুরে বিভিন্ন দপ্তরসহ সাংবাদিক সংগঠন বরাবরে অভিযোগ করেছেন শেরপুর সদর উপজেলার চরপক্ষিমারী ইউনিয়নের সাতপাকিয়া গ্রামের মৃত খাজু মাহমুদের পুত্র মো. জহির উদ্দিন। সে জানান- শাহা আলম ৫৪ বছরের একজন লোক সে কি করে মুক্তিযোদ্ধা হয়? তার বড় ভাইয়ের বয়সই বর্তমানে ৬১ বছরের মত। শাহা আলম আমার বেয়াই ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের দাপটেই সে আমাদের নামে মিথ্যা মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করে আসছে শাহা আলম। শুধু হয়রানিই নয়, সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করতে নানা মিথ্যাচারও করেছে এবং করছে।

অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য আকুল আবেদন করেছেন ৮৬ বছর বয়সী জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার মহিরামকুল বাগবাড়ী এলাকার মৃত নইম উদ্দিনের ছেলে মো. মোতালেব। তিনি আবেদনে উল্লেখ করেন সে একজন দরিদ্র ও অসুস্থ বীরমুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু আবেদন করার পরও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম উঠেনি এবং কোন সনদও পাইনি। স্বাধীনতার ৫২ বছর অতিবাহিত হলেও তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়ায় বর্তমান সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা থেকে শুরু করে সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছি। বর্তমানে তার বয়স ৮৬ বছর। মোতালেবের তিন ছেলে ও এক মেয়ে বিয়ে করে আলাদা সংসার করতেছে। বর্তমানে সে তার স্ত্রী ফুলেছা বেগমকে নিয়ে জামালপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মনিরাজপুর এলাকায় খুবই মানবেতরভাবে বসবাস করছি। বৃদ্ধ বয়সেও তাকে কর্ম করে খেতে হচ্ছে। মনিরাজপুর এলাকায় রাস্তার পাশে ছোট একটি মনোহারি দোকানের ব্যবসা করে স্ত্রীকে নিয়ে খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তিনি। জামালপুর পৌর আওয়ামী লীগের অন্তর্গত ১১নং ওয়ার্ড শাখার উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে ছিলেন। সে অসুস্থ হলে একজন বীরমুক্তিযোদ্ধার সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়াসহ বিভিন্ন সময়ে নানান সহযোগিতা করেছেন জামালপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক প্রয়াত কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম খোকা এবং তাঁর ডিপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সুজায়াত আলী ফকিরসহ জামালপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এবং অনেক মুক্তিযোদ্ধাই তাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিনেন। মো. মোতালেব ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১১ নম্বর সেক্টরে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ ও দেশের মুক্তিকামী মানুষের জন্য অবদান রাখেন। এর প্রমাণ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক কর্নেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী স্বাক্ষরিত তৎকালীন দেশ রক্ষা বিভাগ থেকে তাকে স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র দেন। পরবর্তীতে সে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য ২০১৪ সালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ওয়েব সাইটে আবেদন করেন। ২০১৪ সালে রহস্যজনকভাবে উপজেলা বাছাই কমিটি তার নাম বাদ দেওয়ায় ২০১৭ সালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে সে আপিল করে মুক্তিযোদ্ধা সনদের জন্য। মুক্তিযোদ্ধা সনদের জন্য প্রমাণ হিসেবে তার সব কাগজপত্র ঠিক থাকলেও আজও সে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় নাম তোলা হয়নি এবং কোন সনদ পাননি। ফলে সে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়েও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা থেকে শুরু করে সকল প্রকার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উপরোক্ত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে সত্যের মুল্যায়ন নিশ্চিতকরণের জোর দাবি সচেতনমহলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *