আসাদুজ্জামান সাজু

আমি নিজেকে একজন পেশাদার সাংবাদিক বলে দাবী করি। কিন্তু সব সময় সব সত্য প্রকাশ করিনা। খবরের সব তথ্য হাতে থাকার পরও ওই খবরটি লেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি। তখন একজন সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে বড়ই অসহায় মনে হয়।

আমি দেশের প্রথম সারির গণ্যমাধ্যমে কাজ করি। কিন্তু মাসে যে সম্মানী পাই তা দিয়ে মাসের এক সপ্তাহের পরিবারের খরচ মেটানো সম্ভব হয় না। বউ যখন মাসের শেষে বাচ্চার প্রাইভেটের টাকা, কারেন্ট বিলের কথার বলে, শহরের এলে মুদির দোকানদার বলে ‘ভাই আজ মাসের ৭ তারিখ টাকা দিলেন না যে ? তখন নিউজ লিখতে বসে বার বার ভুল হয়। সেই সময় নিজেকে একজন অদক্ষ সাংবাদিক মনে হয়।

স্থানীয় ভাবে আমি নিজেকে সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে দাবী করি। সকালের ঘটনা বিকালেও আমার অন লাইনে আপ হয়নি। অফিসে ফোন দিলে বলেন, আপনার নিউজ যাবে তবে ঐ ঐ তথ্য দিয়ে নিউজটি সংশোধন করে আবার পাঠান। সেই নিউজ সংশোধন করতে গিয়ে যখন ফোনের ডাটা অন করে দেখি এক ঘন্টা আগে সাংবাদিক দাবীদার ছেলেটা অনলাইনে নয় তার ফেসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে নিউজটি আপ করেছে। তার স্ট্যাটাসে অনেকেই লাইক কমেন্ট করেছেন। তখন নিজেকে একজন স্লোমোশন সাংবাদিক হিসেবে মনে হয়।

সাংবাদিকতার বয়স দুই দশক পার হয়েছে । তথ্যের জন্য একটি দপ্তরে গেলাম। ওই দপ্তরের কর্মকর্তা থেকে কর্মচারী সবাইকে নিজের পরিচয় দিতে হচ্ছে। বলতে হচ্ছে ‘আমি সাংবাদিক অমুক, তমুক পত্রিকায় কাজ করি’। কিন্তু আমার সাথে থাকা ছোট ছেলেটিকে সবাই ভাই ভাই বলে সালাম দিচ্ছে আর আমাকে বলতেছে ‘আগে তো আপনাকে কখনো দেখি নাই’। এ ভাই তো আমাদের অফিসে নিয়মিত আসেন। চা-কফি খাওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘক্ষন আড্ডা দেয়া হয়। তখন নিজেকে
আনসোস্যাল সাংবাদিক মনে হয়।

আমি সৎ, সাহসী ও প্রতিবাদী সাংবাদিক। যখন কেউ বাড়ি করতে শ্যালো মেশিন দিয়ে একটু বালু তোলার চেষ্টা করে তখন আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে প্রতিবাদী সাংবাদিক হই। কিন্তু বাড়ির পাশে একটি ঠিকাদারী কাজে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ঠিকাদার এলাকার প্রভাবশালী রাজনীতিজীবি। সেই খবর প্রকাশ করলে বাড়িতে বউ বাচ্চা নিয়ে থাকতে পাবো না। মামলাও হতে পারে সেই ভয়ে নিউজও লেখিনা। তখন সাহসী থেকে ভীত সাংবাদিক হয়ে যাই ।

কাউকে উদ্দেশ্য করে আমার এ লেখা নয়, এ লেখা আমার জীবনের সাথে মিলে যাওয়া কিছু কিছু স্মৃতি। শত কষ্ট আর অসহায়ত্বের মধ্যেও আমি সাংবাদিকতাকে ভালোবাসি। নিজেকে একজন সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিতে ভালোবাসি। সাংবাদিকতাকে আমি এ বুকে লালন করি। এ ভালোবাসা আমার আমৃত্যু।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, লালমনিরহাট জেলা কমিটি ও প্রশিক্ষন বিষয়ক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *