স্টাফ করেসপনডেন্ট,কুড়িগ্রামঃ

কুড়িগ্রামে বিদ্যানন্দ ফান্ডেশনের গরিবের সুপার সপে এক টাকায় তেল, চাল, লবণসহ প্রায় ১৫টি পণ্য কিনতে পারায় খুশি দেশের উত্তরের দারিদ্রতম জেলার মানুষ। মঙ্গলবার ৩জানুয়ারি দুপুরে ফাউন্ডেশনের নিজস্ব জায়গায় মেয়েদের জন্য একটি এতিমখানা স্থাপন করা হয়। এই এতিমখানা এবং এক টাকা বাজারে কেনাকাটার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ।

ধরলা নদী দ্বারা দ্বি খন্ডিত কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়ন। নদী ভাঙ্গন আর কর্মহীন হয়ে পড়া এসব বাসিন্দাদের পাশে এসে দাঁডিয়েছে স্বেচ্ছাসেবি সংগঠণ বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। নিত্যপণ্যের উর্দ্ধগতি স্বল্প আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস। দিন এনে দিন খেটে খাওয়া মানুষের নুন আনতে পনতা ফুরানোর অবস্থা। সেসব মানুষের মুখে একটু হাসি ফুটাতে বিদ্যানন্দ ফান্ডেশন এক টাকার বাজার কার্য়ক্রম শুরু করেছে। এই বাজারে সুবিধাভোগীরা এক টাকা,চার টাকা এবং সাত টাকায় সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পেরে খুশি হতদরিদ্র এসব মানুষ। কার্ডধারী সুবিধাভোগীরা জনপ্রতি ক্রেতা সর্বোচ্চ ১০টাকার মধ্যে যেন কোন পণ্য কিনতে পারবেন। বাজারে এক টাকা চাল,সুজি,লবণ,এংকর ডাল,সবজি,নুডলস,ডিম। দুই টাকাতে আটা,মসুর ডাল। চার টাকায় তেল,মুরগি,মাছ, এবং সাত টাকায় একটি কম্বল কিনতে পারছেন। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের তালিকাভুক্ত প্রায় ২শ ৫০টি নিম্ন বিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষ ১০ টাকার বিনিমিয়ে এসব দ্রব্যাদি ক্রয় করছেন। দশ টাকায় এসব পণ্য  বাইরে বাজার থেকে কিনতে গেলে প্রায় ৬শ থেকে ৭শ টাকা ব্যয় হতো। যা নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।

ক্রেতা রুবিনা বেগম বলেন,এক টাকা দিয়ে এক কেজি করে চাল, সবজি,লবণ,সুজি, এ্যংকর ডাল,এক হালি ডিম এবং নুডলস এক প্যাকেট কিনলাম। হামার মতো গরিব মানষের এটাই উপকার। বাইরের মানষে কয় হামরা খালি ত্রাণ খাই। কিন্তু হামরা টাকা দিয়ে কিনবার পাই এটাই হামার তৃপ্তি। এমন বাজার আরও হলে হামার এতি ক্যার গরিব মানষের ভাল হইল হয়।

ক্রেতা আব্দুল জলিল বলেন,কামলা দিয়া হাজিরা পাই ৩শ টাকা। ত্যাল,নুন,মরিচ,চাল কিনতে সোগ শ্যাষ। যে টাকা আর করি তাতে জিনিস পাতির দামী গরিব মানষের বাচি থাকা ধইনশোন হয়া গেছে। এই এক টাকার বাজার আসিয়া ১০টাকায় ম্যালা কিছু কিনবার পাইছি। হামার টাকাও থাকিল প্যাটও বাচিল। বাইরা থাকি কিনবার গেইলে ৬/৭শ টাকা নাগিল হয়।

ক্রেতা বুলবুলি আকতার বলেন,একটা কম্বলও নাই। যে জার পড়ছে তাতে করিয়া ছোয়া পোয়া নিয়া খুব কষ্টে দিন কাটছে। খ্যাতা সিলাই করি তাকে দিয়ে শীত কাটাই। আজ এক টাকার বাজারে এসে সাত টাকা দিয়ে একটা কম্বল কিনছি। এটা বাজারত কিনবার গেলে নাই করি ৩শ টাকা নাগিল হয়।

এতিম কিশোরী সাদিয়া আকতার জানায়,এক বছর আগে মা মারা গেছে। সেই থেকে দাদীর কাছে বড় হচ্ছে। কিন্তু অভাবের সংসারে তিন খাবার জোটে সেখানে ভালোমন্দ খাবার যে এক ধরনের স্বপ্ন তার কাছে। বিনামূল্যে এই এতিম খানায় থাকতে পেরে খুশি সে। পড়াশোন করে মানুষের মতো মানুষ হয়ে এতিম শিশুদের পাশে দ্বাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে সে।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের অমিত বলেন, প্রায় এক বছর আগে দেশের বৃহৎ রান্না করার পাতিল এখানে স্থাপন করা হয়েছে। এই পাতিলে এক সঙ্গে প্রায় ১০হাজার মানুষের রান্না করা সম্ভব। বন্যা কবলিত কুড়িগ্রাম জেলায় ইতোমধ্যে এই পাতিলে রান্না করে ঈদ,বন্যাতে প্রায় ৮হাজার মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের হেড অফ কমিনিকেশন সালমান খান ইয়াসির বলেন, কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ৭টি এতিমখানা রয়েছে। এসব এতিমখানা পিতা-মাতা হারা দরিদ্র মেয়েদের বিনামূল্যে থাকা,খাওয়া এবং পড়াশোনা করা হয়। কুড়িগ্রামে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের নিজস্ব জায়গায় হজরত আয়েশা(রাঃ)এতিমখানা নির্মান করা হয়েছে। এই এতিম খানায় শতাধিক মেয়েরা বিনামূল্যে থাকতে পারবে। বৈশিক মন্দায় দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে গরিব অসহায় পরিবার গুলো একটু যেন পুষ্টিযুক্ত খাবার খায়। এছাড়াও টাকা দিয়ে কিনে মানুষ যে আনন্দটা পায় সেটা ত্রাণ দিলে পায় না। সেজন্য স্বল্প মূল্যে তারা যেন কেনাকাটার আনন্দ উপলব্ধি করতে পারে তার জন্যই  এমন আয়োজন।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন,এক টাকার বাজার এই জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিব মানুষের জন্য উপকার হবে। এতে করে মানুষের পুষ্টির চাহিদা এবং ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে বলে তিনি মনে করেন। এছাড়াও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনকে সার্বিক সহযোগতিার আশ্বাসও দেন তিনি।

এক টাকার বাজার ও  হজরত আয়েশা(রাঃ)এতিমখানা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন,সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম,হলোখানা ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রেজা, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স-প্রিন্ট মিডিয়া কর্মীগণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *