পরিতোষ কুমার বৈদ্য,শ্যামনগর প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা।

আজ শুক্রবার (২০ মে ২০২২) সকাল ১০:৩০ টায় খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ূন কবীর বালু মিলনায়তনে লিডার্স এর আয়োজনে মিট দ্যা প্রেসে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলায় জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবী করেছে সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ।

মিট দ্যা প্রেসে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা লিডার্স এর নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল। সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষার সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্রের সঞ্চালনায় বক্তব্য তুলে ধরেন বাংলদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন মিন্টু, কালের কন্ঠের খুলনা ব্যুরো প্রধান গেীরাঙ্গ নন্দী, নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরিফ, খুলনা জেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের সভাপতি এম. নাজমুল আজম ডেভিড, বাপা ও ওয়াটার কিপার বাংলাদেশের শেখ নুর আলম, ফেইথ ইন এ্যাকশনের নির্বাহী পরিচালক নৃপেন বৈদ্য, সচেতন সংস্থার সাকিলা পারভীন প্রমূখ।

মিট দ্যা প্রেসে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন আজ মানবতার জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও বৈশি^ক উষ্ণতায় বাংলাদেশর অবদান সর্বনিম্ন (মাত্র ০.৩%), দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে মেরুঅঞ্চলের বরফগলন ত্বরান্বিত হচ্ছে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায়, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¦াস ও লবনাক্ততা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আইপিসিরি তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে পৃথিবীতে দুর্যোগ বেড়েছে ১০ গুন। ভৌগলিক অবস্থানের কারনে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট দুর্যোগ বাংলাদেশে আঘাত করে। দেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সামুদ্রিক দুর্যোগে সমুহের ৭০%+ বয়ে যায় সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার উপর দিয়ে। কিন্তু এ অঞ্চলের অবকাঠামো খুবই দুর্বল। প্রায় ৫৭০০ কি. মি. বাঁধ খুবই নাজুক। এখনও অনেক স্থান রয়েছে যা সামান্য জোয়ারেই ভেঙে গিয়ে এলাকা প্লাবিত হবে। এ অঞলের মানুষের ঘর বাড়ি মাটি, কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরি যা দুর্যোগ সহনশীল নয়। জনসংখ্যার অনুপাতে আশ্রয়কেন্দ্র খুবই সামান্য। প্রতিটি দুর্যোগে ভেসেযায় মানুষের তিলে তিলে গড়া সঞ্চয় ও সম্পদ। ক্রমবর্ধমান দুর্যোগের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের মানুষের খাদ্য সংকট, স্বাস্থ্য ঝুঁকি, জীবিকার উৎস হ্রাস, অপুষ্টি, সুপেয় পানির অভাবে রোগ ব্যধি বৃদ্ধিসহ প্রতি বছর প্রচুর আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির সমুক্ষীন হবে। উপকূলীয় অঞ্চলে গত ৩৫ বছরে লবণাক্ততা পূর্বের তুলনায় ২৬% বৃদ্ধি পেয়েছে। উপকুলের ৭৩% মানুষ সুপয়ে পানি থেকে বঞ্চিাত। লবণাক্ততার কারনে কৃষি ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে আশংকাজনকভাবে। এছাড়া লবাণাক্ততা বৃদ্ধিও ফলে এ এলাকায় বসবাসকারীদের গর্ভবতী মায়েদের প্রি-একলেম্পশিয়া, উচ্চ রক্তচাপ ও জরায়ু সংক্রমন বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে।

আরও বলা হয়, এত কিছুর পরেও বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে জাতীয় বাজেটের একটি বড় অংশ যোগান দিয়ে থাকে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সুন্দরবনের আর্থিক অবদান বছরে ৫,৮৭০ কোটি টাকা। মৎস্য সম্পদের মধ্যে এ অঞ্চলে রয়েছে চিংড়ি, কাকড়া ও কুঁচিয়া। চিংড়ি ও কাঁকড়া, কুঁচিয়া রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকার মানুষ বাজেটে তাদেও ন্যয্য হিস্যা পায়নি। গতবছর ও এবছর ৩টি মেগা প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হলেও তার কাজ এখনও শুরু হয়নি। মানুষ এখনও অরক্ষিত এবং মানবেতর জীবন যাপন করছে। এই প্রেক্ষাপটে আমরা গত ১৮ তারিখে সাতক্ষীরা ২ টি সভা, গত ১৯ তারিখে শ্যামনগর ও কয়রা দুর্যোগ কবলিত এলাকা পরিদর্শণ ও মানুষের সাথে কথা বলেছি।

উত্থাপিত সুপারিশে বলা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এরাকাকে সুরক্ষিত করার জন সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলাকে জলবায়ু ঝুঁকিপুর্ন বা দুর্যোগ ঝুঁকিপুর্ন এলাকা ঘোষনা করে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বাজেটে বিশেষ বরাদ্ধ দেওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ পুন:নির্মান, খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধানে বৃহত জলাধার নির্মান, পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ, উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আদলে একটি বাড়ি একটি সেল্টার কার্যক্রম, নদীর চরে ব্যাপকহারে বৃক্ষরোপন কর্মসূচি গ্রহণ ও সুন্দরবন রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে এখানের মানুষের জীবন ও জীবিকা সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *