স্টাফ রিপোর্টার।॥
বহুল আলোচিত দুর্নীতিবাজ সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমানসহ ৩ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। ওই উপজেলা প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক খবর সাপ্তাহিক নতুন বাংলার সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর জেলার অনেক সচেতন মহল এ দাবী জানান। একটি বিশ^স্ত সুত্র জানায়, উক্ত মোখলেছুর সদর উপজেলা প্রকৌশলী হিসেবে যোগদানের পর হতে পুরো অফিসটিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করার পাশাপাশি অত্র অফিসের প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে অসদাচরন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।।উক্ত দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় তাদের অপকর্মের ও দুর্নীতির বিস্তারিত তথ্য একের পর এক বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে। সদর উপজেলার লালমনিরহাট- রংপুর মহাসড়কের চিনি পাড়া এলাকার ২কিঃমিঃ রাস্তার সংস্কার কাজ রাবিস দিয়ে ও ৩নম্বর ইটের খোয়া দিয়ে রোলার করা হয়েছে। ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ওই সংস্কার কাজটি দুর্নীতির মাধ্যমেই সম্পাদন করতে চেয়েছিল সংশ্লিষ্টরা। কিন্ত বাধ সাধে একজন সাংবাদিক। ওই সাংবাদিক অভিযোগ করার পর পুনরায় কাজ করার নির্দেশ প্রদান করেন উক্ত প্রকৌশলী। এ ছাড়াও রাজপুর ইউনিয়নের খোলাহাটি মৌজার ছালামের বাড়ির পাশের্^ ১০০ মিটার প্যালাসাইডিং নির্মানও দুর্নীতি চলছে বলে অভিযোগ খোদ এলাকার চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের। সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার রাস্তা-ঘাট নির্মানে এভাবেই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে উক্ত প্রকৌশলী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের নিকট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি এখানে দায়িত্ব গ্রহনের পর নি¤েœ উল্লেখিত উন্নয়ন কাজগুলোতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সাথে আতাঁত করে অত্যান্ত নি¤œমানের কাজ সম্পাদন করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।তার ঘুষ বাণিজ্যের অর্থ অত্র অফিসের কোন কর্মকর্তা-বা কর্মচারিকে ভাগ না দেয়ার কারনে পুরো অফিসের ষ্টাফগন উক্ত প্রকৌশলীর উপর চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন। যা ওই উন্নয়নমুলক কাজগুলো নিরপেক্ষ প্রকৌশলীর মাধ্যমে সুষ্ট তদন্ত করলে ওই কুখ্যাত দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমানের পুকুর চুরির বিষযটি বেড়িয়ে পড়বে বলে অনেকেই মনে করছেন। প্রতিটি বিলের ৭% ঘুষ নিয়ে তবেই বিলে স্বাক্ষর করেন তিনি। তবে ওই ঘুষের টাকা অত্র অফিসের কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে ভাগ না দেয়ায় ওই অফিসের সকল ষ্টাফগন চরম ক্ষুব্ধ তার উপর।কিন্ত তার ভয়ে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী মুখ খুলছেননা।তারা এহেন দুর্নীতিবাজ ও স্বার্থপর প্রকৌশলীর দ্রুত বদলির দাবী জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তাÑকর্মচারী অভিযোগ করে বলেন,চাকুরী জীবনে এরকম কুখ্যাত দুর্নীতিবাজ ও স্বার্থপর কর্মকর্তা দেখিনি।উক্ত প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে গত সংখ্যায় খবর প্রকাশিত হওয়ায় তিনি চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন পত্রিকা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।তার বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে যা পরের সংখ্যায় প্রকাশ করা হবে।উল্লেখ্য, লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ৯টি প্রকল্পের আওতায় ৪৪ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে রংপুর বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৫ কোটি টাকার প্রায় ৮কিঃমিঃ রাস্তার প্রশস্ত করণ সহ নির্মাণ কাজ ওজওউচ-২ প্রকল্পের আওতায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ কিঃ মিঃ রাস্তার নির্মাণ কাজ, ৪ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে লালমনিরহাট সদর উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন সম্প্রসারণ কাজ, চঊউচ-৩ প্রকল্পের আওতায় ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আনুভুমিক ও উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারনের কাজসহ ঘঙইওউঊচ প্রকল্পের আওতায় ১১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১৫ কিঃ মিঃ রাস্তার প্রশস্ত করণ সহ রক্ষণাবেক্ষণ এর কাজে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির মধ্যে দিয়ে চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে।সদর উপজেলা প্রকৌশলী ওইসব উন্নয়নমুলক কাজের সার্বক্ষনিক তদারকি না করে বেশীর ভাগ বাসায় সময় কাটান বলে জানা গেছে।তবে তার স্ত্রী যখন বাসায় না থাকেন ঠিক সেই সময় তিনি বাসায় আড্ডায় ব্যস্ত থাকেন বলে নাম প্রকাশ নাকরার শর্তে এক ব্যাক্তি সাংবাদিকদের জানান। উন্নয়ন কাজগুলো সঠিকভাবে তদারকি না করার কারনে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মোখলেছুর রহমান জানান, অনেক প্রকল্পের কাজ এক সাথে চলমান থাকায় সব প্রকল্প তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান কতিপয় ঠিকারের সাথে অবৈধ আতাঁত করে উন্নয়নমুলক কাজগুলোতে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি করার কারনে রাস্তাঘাট সংস্কারের অল্পদিনের মধ্যে ও সামান্য বৃষ্টিতেই নষ্ট হয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সদর উপজেলার ৪৪ কোটি টাকা কাজের সকল প্রকল্পগুলো উধর্তন কর্মকর্তার মাধ্যমে সরেজমিনে তদন্ত করলে উক্ত প্রকৌশলীর দুর্নীতির নামে রাম রাজত্বের ঘটনাটি প্রকাশ হয়ে পড়বে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা মোখলেছুর যে ভাবে কাজ করতে বলবে ঠিকাদার সেভাবেই কাজ করবে।তবে ১০০% ভাগ কাজ আদায় করে নিলে তাদেরকে ৭% ঘুষ দেয়া সম্ভব হবেনা, এ কারনে কিছুটা অনিয়মের আশ্রয় নিতে হয় বলে জানান তারা। ঠিকাদারগন আরও বলেন, কাজগুলোতে লেজ থাকায় ১০০% ভাগ কাজ করা খুবই দুস্কর ব্যাপার হয়ে পরে। এছাড়াও অফিসে বিল নিতে গেলে প্রকৌশলী মোখলেছুরকে তার দাবীকৃত ঘুষের টাকা না দিলে ফাইলে স্বাক্ষর করেন না তিনি।এ ছাড়াও ট্রেজারীসহ বিভিন্নস অফিসে ঘুষসহ সেলামী না দিলে বিল থাকাবস্থায় কাকিনা- মহিপুর সড়ক নির্মানসহ ২য় তিস্তা সেতু নির্মানে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের নিকট থেকে ইতো মধ্যে প্রায় কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও অত্র উপজেলার চলতি ও বিগত অর্থ বছরে রাস্তাঘাট সংস্কারের নামে দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহন করে কয়েক বছরে কোটি কোটি সরকরি টাকা লুটপাট করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সাথে আতাঁত করে। উক্ত প্রকৌশলী একজন নাইট গার্ডের পুত্র হলেও তিনি বর্তমানে দুর্ণীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন,যা দুর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক)সরেজমিনে সুষ্ট ও নিরপেক্ষ তদন্ত করলে এই পুকুর চুরিসহ কোটিপতি বনে যাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পাবে। কালিগঞ্জ উপজেলার একজন সরকারি ড্রাইভার বলেন, ওই প্রকৌশলী তার অবৈধ অর্থের জোরে নারীসহ অনেক কেলেংকারীর সাথে জড়িত রয়েছে।ওই ড্রাইভার আরও বলেন, এলাকার যুবকরা ঔক্যবদ্ধ হয়েছিল উক্ত প্রকৌশলীর অপকর্ম হাতে নাতে ধরার জন্য। কিন্ত আমি টের পেয়ে মাইক্রো ভাড়া করে সে যাত্রায় তাকে রক্ষা করা হয়।সমপ্রতি কাকিনা-সুকানদীঘি সড়কের সংস্কার কাজ করা হয়। কাজ করার ১মাসের ব্যবধানে ওই রাস্তাটি পুনরায় পুর্বের ন্যায় খানা খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এ চাড়াও কালিগঞ্জ উপজেলার যে সকল রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে, সে সকল রাস্তা অল্প সময়ের মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে যা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে।এ ব্যাপারে উক্ত প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান বলেন, আমি আর এখানে থাকতে চাচ্ছি না,আপনারা (সাংবাদিকরা)আমার বিরুদ্ধে লিখে বদলি করে দিলে আমার উপকার হত বলে তিনি দম্ভের সাথে এসব কথা বলেন। তিনি এখানে দুর্নীতি করতে করতে এমন পর্যায়ে গেছেন যে,চক্ষু লজ্জায় আর এখানে থাকতে চাচ্ছেন না। একই বলে বিশ^ বেহেয়া অফিসার।এদিকে আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী ফজলুল হকের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ উঠেছে।জেলার আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের বামনের বাসা থেকে খালেক মোখতারের বাড়ী ১ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজে বিটুমিন ঠিকভাবে না দেয়ায় একটু বৃষ্টিতেই খানাখন্দের হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গত ১৮ জুলাই বুধবার ওই সড়কের বিটুমিন কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ হয়। এলাকাবাসি জানায়, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রকৌশলীর সাথে যোগসাজস করে কাজটি অত্যান্ত নিম্মমানের করায় সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কের খানাখন্দের সৃষ্টি হয।১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই সড়কের সংস্কার কাজে প্রকাশ্যে দুর্নীতি ধরা পড়লেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দুর্নীতির সাথে জড়িত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অদ্যাবধি কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় সচেতন মহলের মধ্যে চড়ম ক্ষোভসহ অসন্তোষ বিরাজ করছে। এলাকাবাসি সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী এতবড় দুর্নীতি করল, অথচ তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহন না করে শুধু তদন্ত করে চলে গেলেন বিষয়টি বিজ্ঞ মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে।অনেকে বলছেন, চোরে চোরে তারা মাছতাতো ভাই হওয়ায় দুর্ণীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে ওই দুর্নীতির খবরগুলো সাপ্তাহিক নতুন বাংলার সংবাদ পত্রিকায় একাধিকবা প্রকাশিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও ঠিকাদারগন ক্ষুব্ধ হয়েছেন।এ ব্যাপারে এল.জিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাকিউর রহমান বলেন, উক্ত প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে পত্রিকায় খবর দেখেছি, কিন্ত সময়ের অভাবে এসেব ঘটনায় কোন ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ হয়নি। তবে তার বিষয়ে অনেক অভিযোগ শুনেছি, সবগুলো তদন্তপুর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান তিনি।