নূর-ই-আলম সিদ্দিক,কচাকাটা, কুড়িগ্রাম :
কুড়িগ্রামে নাগেশ্বরীর প্রস্তাবিত কচাকাটা উপজেলায় গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও উজানী ভারত থেকে বয়ে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার ভয়াল স্রোতে- ভেঙ্গে গেছে কচাকাটা,কেদার বল্লভের খাস ও বলদিয়ার প্রধান প্রধান সড়কের গুরুত্বপূর্ন ব্রিজ, কালভার্ট; স্রোতে ধ্বসে গিয়ে ছোট বড় প্রায় ৫০ টি গর্তের আকার নিয়েছে এসব রাস্তায় রাস্তায়। শুধু তাই নয়-গর্ত ছাড়া রাস্তার বাকি অংশটুকুও যেন এখন কঙ্কালসার,খানা-খন্দে ভরপুর।
বিশেষ করে কচাকাটা থেকে ভূরুঙ্গামারী যাওয়ার পথে তালতলা নামক স্হানে প্রধান সড়কে ব্রিজ ভাঙ্গন,কেদার মহিলা মহাবিদ্যালয় থেকে আয়নালের ঘাট পর্যন্ত রাস্তায় প্রায় ছোট বড় ১২ টি ভাঙ্গা, কচাকাটা কলেজ থেকে নায়কের হাট পর্যন্ত পাকা রাস্তার ৬টি স্হানে ভাঙ্গা সহ কচাকাটা ইউনিয়নের ব্যাপারীটারী,নায়কের হাট,বালাবাড়ী,ছাটবাড়ী,চরের গ্রাম,ভোটের হাল্যা, তরীর হাট,বটতলা,কেদার ইউনিয়নের- সাতানা,পূর্বখামার,চর টেপারকুটি,মোল্লা পাড়া এবং বল্লভের খাস ইউনিয়নের চর রহমানের কুটি ও কুমোদপুর উল্লেখ যোগ্য। এসব এলাকার রাস্তাগুলো চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় যোগাযোগে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে কচাকাটা থানা তথা পূর্ব দুধকুমরের লক্ষাধিক মানুষ।বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে জেলা-উপজেলার সকল কাজ কর্ম থেকে। শুধু তাই নয়- এসব এলাকায় সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে এর প্রভাব পরেছে স্হানীয় মানুষদের ব্যবসা বানিজ্যে,শিক্ষা,স্বাস্হ্য,জীবন যাত্রা ও জীবন জীবিকায়।
যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙ্গে যাওয়ায় সড়ক পথে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষগুলো কেমন আছেন,এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাইক্রো চালক ও মটর শ্রমিক সদস্য মো: সোহেল রানা লিটন বলেন-
বলা চলে আমরা ২৪ ঘন্টাই রোডের উপর থাকি।সে রোডটাই যদি ভাঙ্গা-চোড়া হয় তাহলে আমরা গাড়ী চালাই ক্যামনে! বন্যা পরবর্তীতে এই কয়েকদিনে আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে। রাস্তা-ঘাট যদি খুউব তারাতারি ঠিক না হয়-তাহলে,আমাদের অনেককেই না খেয়ে থাকতে হবে!
সরেজমিনে গিয়ে কচাকাটা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: ছামছুল আলম (বি.এস.সি)’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন-গত শুক্রবার পর্যন্ত আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বন্যার্তদের আশ্রয় কেন্দ্র ছিল।স্কুল খোলার পর আজ পর্যন্ত ছাত্র/ছাত্রীর উপস্হিতি অনেক কম,৬০০-৭০০ শত ছাত্র/ ছাত্রীর মধ্যে কেবল ৪০/৫০ জন আসে। কারন জানতে চাইলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারনে এমনটি হচ্ছে বলে তিনি এ প্রতিবেদককে উল্লেখ করেন।
একই কথা বলেন-কেদার মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো: হাফিজুল মন্ডল। তিনি বলেন-আমার কলেজের সাথেই ব্রিজের কাছে ভেঙ্গে যাওয়া সহ এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় ভাঙ্গনের ফলে ছাত্রীদের কলেজে আসতে চরম অসুবিধা হচ্ছে।
কচাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান জনাব আ: আউয়াল বলেন-আমার নির্বাচনী পুরো এলাকাটি চরাঞ্চল নদী বেষ্টিত হওয়ায় বন্যা মৌসমে অন্য এলাকার তুলনায় আমার এলাকাটি ক্ষতির শিকার হয় অনেক বেশি। গত কয়েকদিনের বন্যায় আমার এলাকার রাস্তা-ঘাট গুলি একটিও চলাচলের উপযোগী নয়। বন্যা পরবর্তীতে এযাবৎ পর্যন্ত আমি নিজস্ব অর্থায়নে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কচাকাটা বিজিবি ক্যাম্পের পাশে ভাঙ্গা রাস্তায় এবং তরীরহাট নূরানী মাদ্রাসায় সাথে ভাঙ্গা রাস্তায় বাঁশের সাঁকো তৈরী করে দিয়েছি। সেই সাথে তিনি তার নিজ ইউনিয়ন সহ কচাকাটা তথা পূর্ব দুধকুমর বাসীর জীবন যাত্রায় সকল ক্ষেত্রে দূর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

বন্যা পরবর্তীতে এলাকার স্বার্বিক পরিস্হিতি এবং তা উত্তরণে জানতে চাইলে নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হায়াৎ মুহম্মদ রহমতুল্যাহ বলেন-
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সকল তথ্য জেলায় সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি,এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন ও দূর্ভোগ লাঘবে সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করবেন বলে এ প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *