আব্দুল আজিজ মজনু,ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) ঃ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বন্যার পানি কিছুটা কমলেও দুর্দশা কমেনি বানভাসা ১ লাখ মানুষের। ত্রানের জন্য হাহাকার এখন ধরলা পাড়ে। হাজার হাজার বানভাসী মানুষ ওয়াপাদা বাধেঁ আশ্রয় নিয়েছে বটে বসবাস করছে নানান প্রতিকুলতায়। অনেক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে আসতে না পারায় ঘরের মধ্যেই মাচা তৈরী করে অবস্থান করছে। ফলে বন্যা উপদ্রæত এলাকায় এবং আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে ত্রাণ সরবরাহ জরুরী হয়ে পড়েছে। কিন্তু গত চার দিনে সরকারী বেসরকারী সংস্থাকে বন্যা কবলিত এলাকায় তেমন কোন ত্রাণ দিতে দেখা যায়নি। উপজেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে দু একটি এলাকায় কিছু শুকনা খাবার বিতরন করা হলেও তা পরিমানে খুবই সামান্য। উপজেলা প্রশাসন এবং ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে খিচুরী দেয়া হলেও তা আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে সীমাবদ্ধ ছিল। বন্যা উপদ্রæত এলাকায় গত চার দিনে কোন ব্যক্তি বা সংস্থার পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণের খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় কাশিপুর ইউনিয়ন যুবলীগ ও চর গোরকমন্ডল এলাকায় নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন ছাত্রদল বন্যার্তদের মাঝে গত সোমবার কিছু শুকনা খাবার বিতরণ করেছে।
সরে জমিনে দেখা গেছে, অনেকের বসবাস তাদের পোষা গরু ছাগলের সঙ্গে। খাওয়া দাওয়া করছে সেখানে। বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা গেছে আশ্রিত মানুষের মাঝে। পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। প্রায় ৮কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বড়ভিটা বড়লই হাজির বাজার থেকে বড়ভিটা,বড়লই,পুর্বধনিরাম,পশ্চিম ধনিরাম,প্রানকৃঞ্চ,জ্যোৎকৃষ্টহরি,সোনাইকাজী,কবিরমামুদ এলাকার প্রায় ত্রিশ হাজার বানভাসী মানুষ এখন ওয়াপদা বাঁধটিতে গাদাগাদি হয়ে বাস করছে। কেউ খোজ রাখে নি তাদের। অনেকে জানালেন, সরকার আমাদের জন্য অনেক কিছু দিয়েছে কিন্তু আমরা পেলাম না।
চর গোরকমন্ডল গ্রামের আসমা জানালেন, আমার পরিবারের লোকজনসহ আবাসনের পাশে মানবেতর জীবন যাপন করছি আজও কেউ আমাদের খোজ রাখেনি।একই গ্রামের আবু হোসেন জানালেন, বন্যার পানি নিমিষেই আমার ঘরবাড়ী ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। কোন কিছুই রক্ষা করতে পারি নাই। কোন মতে জীবন নিয়ে বেঁচে আছি। এই কথা জানালেন আবুল হোসেন। ওই গ্রামের খোতেজা ও আসমা জানালেন আমার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একদিন এসেছেন আর আসেন নাই। সরকারী সাহায্যতো দুরের কথা কেই খোজও রাখেনি। বাড়ীঘর বানের বানিতে ভাসিয়ে গেছে এমন ইদ্রিস আলী,পশ্চিম ধনিরামের সুবল,বিঞ্চু,মালেক জানালেন আমাদের যা কিছু ছিল তা শেষ হয়ে গেছে। আমরা এখন ওয়াপদা বাধেঁর সাহের বাজারে আশ্রয় নিয়ে আছি। স্কুল ছাত্রী শুশি জানায়, আমরা পড়ালেখা করতে পারছি না। আমরা কত অসহায় অবস্থায় আছি। শুধুমাত্র আপনি আসলেন-আমাদের খোজ নিলেন। কই-যারা আমার বাবা মায়ের ভোট নিয়ে চেয়ারম্যান মেম্বার হলেন তারাতো আসলেন না। এইটা আমাদের কপালের দোষ।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবেন্দ্রনাথ উরাঁও জানিয়েছেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করায় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া বানভাসী মানুষজন বাড়ী ফিরতে শুরু করেছে। গত সোমবার থেকে দূর্গতদের খাওয়ানোর জন্য উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের ব্যবস্থাপনায় খিচুরী রান্না ও বিতরন শুরু করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *