হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামে ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনের ঘোষণার পর ভুটানের রাজা জিগমে খেসার ওয়াংচুক’র আগমন ও সফরের মধ্যদিয়ে আলোর মুখ দেখছে জেলাবাসী। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অঞ্চলটিকে ঘিরে বাণিজ্যিক হাব হওয়ায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। পাল্টে যাবে এ জেলার দৃশ্যপট। এর মাধ্যমে পিছিয়ে পরা এ জেলাকে অনন্য এক রোডম্যাপে যুক্ত করার সুযোগ তৈরী
করে দিয়েছে। তবে ভুটানের সাথে সড়ক, নৌ, রেল ও আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়া হলে ভুটান, ভারতসহ বাংলাদেশের জনগণ উপকৃত হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালে লন্ডনে এক দ্বিপক্ষীয় সভায় ভুটানের রাজা ও রানীর সাথে কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থিৈনতক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তাব দেন। এ বিষয়ে তারা সম্মতি জানালে কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী সড়কে ধরলা ব্রীজের পূর্বপ্রান্ত মাধবরাম মৌজায় কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসন ১৩৩দশমিক ৯২একর খাসজমি ইতিমধ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তপক্ষ (বেজা) কে হস্তান্তর করেছে। আজ (২৮মার্চ) ভুটানের রাজা জিগমে খেসার ওয়াংচুক কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থানটি পরিদর্শন করবেন। জায়গাটি কুড়িগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্টে থেকে আড়াই কিলোমিটার পূর্ব-উত্তরে ধরলা নদীর ব্রীজ সংলগ্ন সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মাধবরাম মৌজায় অবস্থিত। জায়গাটির বেশিরভাগ এলাকা খাসজমি হওয়ায় সরকারের বিশেষ সুবিধা হবে।

এছাড়াও আশেপাশে পর্যাপ্ত জমি রয়েছে যা একোয়ার করে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ নেয়া যাবে। বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে জিটুজি ভিত্তিক প্রস্তাবিত ভুটানিজ বিশেষ অর্থিৈনতক অঞ্চল পরির্দশনে রাজা ও রানীর আগমনকে ঘিয়ে পরির্দশনকৃত স্থানে নেয়া হয়েছে সব্বোর্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রস্তাবিত এলাকায় তৈরী হয়েছে একটি বিশেষ মঞ্চ। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে কুড়িগ্রামবাসী। সেইসাথে তারা প্রত্যাশা করছেন এই কর্মযজ্ঞকে ঘিরে এলাকার দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমকিরা পাবে কাজের সুযোগ। এদিকে খাসজমিতে বসবাসকৃত মানুষ বলছে তারা অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিরোধীতা করতে চান না। তবে বাপ-দাদার আমল থেকে বসবাস করা জায়গা ও জমির জন্য ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা করতে হবে। এনিয়ে এলাকাবাসীর সাথে দফায় দফায় আলোচনা করেছে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে সচেতন নাগরিক কমিটি-সনাক কুড়িগ্রামের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চলটি কার্যকর করতে গেলে কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন চালু করতে হবে। যাতে এই পথ দিয়ে ভারত দিয়ে সহজে ভুটান যাতায়াত করা যায়। এছাড়াও পাশর্^বর্তী লালমনিরহাট জেলার পরিত্যক্ত বিমানবন্দর ও ভারতের সাথে বৃটিশ আমলে চলাচলকৃত রেল
পূণরায় স্থাপনের মাধ্যমে চালু করা গেলে শুধু ভুটান নয় ভারতের সেভেন সিস্টারের জনগণও উপকৃত হবে। কুড়িগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আব্দুল আজিজ জানান, ভুটান সরকার বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুললে এই জেলায় ব্যবসার প্রসার ঘটবে। বিনিয়োগ বাড়বে। দক্ষ ও অদক্ষ মানুষের ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মীর্জা নাসির উদ্দিন জানান, অর্থনৈতিক
অঞ্চলটি চালু হলে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ^বিদ্যালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ইন্টার্ণ হিসেবে কাজের সুযোগ পাবে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, ভুটান সরকার তাদের নিজস্ব অর্থায়নে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি চালু করবে। আমরা ইতিমধ্যে
১৩৩দশমিক ৯২একর খাসজমি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তপক্ষ (বেজা) কে হস্তান্তর করেছি। এটি চালু হলে স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান হবে, শিক্ষা- সংস্কৃতির বিনিময় হবে, দুদেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *