সিরাজী এম আর মোস্তাক, ঢাকাঃ
NTRCA’ বেসরকারী স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগদানকারী সরকারী কর্তৃপক্ষ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও দীর্ঘ নিয়োগজট কাটিয়ে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগে ২০০৫ সালে বিএনপি-জামাত সরকার এটি গঠন করেন। ২০০৫ সালেই প্রথম পরীক্ষাটি হয়। তাতে লক্ষ লক্ষ প্রতিযোগী থেকে সকল বিষয়ে (মাত্র ০৬% পাশের হারে) স্বল্পসংখ্যক যোগ্য শিক্ষক প্যানেলভুক্ত হয়। তাদের নিয়োগবিধি প্রণয়নে কিছু সময়ক্ষেপণ হয়। এমতাবস্থায় ক্ষমতার পট পরিবর্তনে নিয়োগদান সম্ভব হয়নি। এরপর ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকার প্যানেলভুক্তদের নিয়োগদান ছাড়াই পরীক্ষা নিতে থাকেন এবং ৪টি প্যানেলজট তৈরী করেন। এ সুযোগে এনটিআরসিএ’র অসাধু কর্মকর্তারা মোটাঅংকে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার ভুয়া সনদ দিয়ে পূর্ববিধিতেই নিয়োগদান করেন। এতে বৈধ সনদধারীরা বঞ্চিত হন এবং প্যানেলজট বাড়তে থাকে। আর ঘঞজঈঅর ড্রাইভার থেকে চেয়ারম্যান পর্যন্ত প্রায় সবাই রাতারাতি কোটিপতি হন। এসংক্রান্ত বহু খবর প্রকাশিত হয়েছে। এরপর আওয়ামীলীগ সরকারও একইভাবে ১৬টি প্যানেলজট করেছেন। ইতোমধ্যে ১–১৬ নিবন্ধনধারীদের শুরুদিকের প্রায় সবারই চাকুরির বয়স ৩০বছর পার হয়েছে। তাদের নিয়ে আরো জটলা বেধেছে। ফলে গত তিনটি গণবিজ্ঞপ্তিতে এসকল বয়স্ক সনদধারীরা বঞ্চিত হয়েছেন। তারা এখন প্যানেলভিত্তিক নিয়োগের জন্য দীর্ঘ ৫মাসের অধিককাল তথা ১৫৫দিন যাবৎ ঢাকা শাহবাগে আমরণ অনশন করছেন। সেখানে এক ভয়াবহ অমানবিক ও দুর্র্গতিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে।

দীর্ঘদিন ধরে অনশনরত সনদধারীরা সরকার বাদে প্রায় সবারই সমর্থন পেয়েছেন। দেশের শিক্ষিত-সচেতন নাগরিক ও ছাত্রসমাজ সকলেই তাদের ন্যায্য দাবিতে একমত। কারণ, তারা সবাই জন্মসুত্রে বাংলাদেশের নাগরিক। এদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। সরকারের বিধিবদ্ধ নিয়মেই পরীক্ষায় লক্ষ লক্ষ সম-যোগ্যতাসম্পন্ন প্রতিযোগীকে হারিয়ে উত্তীর্ণ ও প্যানেলভুক্ত হয়েছেন। তাদের তালিকা ও যোগ্যতা নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। তারা প্রচলিত দুই বা তিন লাখ মুক্তিযোদ্ধার মতো বিতর্কিত বা বিদেশি তালিকাভুক্ত নয়। যেমন, বাংলাদেশে ৩০লাখ শহীদ ও ২লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনের চেয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংখ্যা কম; যা পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও নেই। অথচ সরকার তাদেরকে ভাতাসহ তাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের কোটাসুবিধা দিচ্ছেন। ঘঞজঈঅর মতো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পে-স্কেলসহ নানা সুবিধা দিচ্ছেন। আর প্যানেলভুক্ত অনশনরতদের প্রতি ভ্রুক্ষেপও করছেন না। তাদের অন্যায়ভাবে অধিকার বঞ্চিত করছেন। কিন্তু কেন? তারা কি দুর্বল, নাকি ভেসে আসা কচুরিপানা? কখনোই নয়। তাদেরই ভাই-বোন ও আত্নীয়-স্বজনেরা এদেশের প্রশাসনসহ সকল দপ্তরে নিয়োজিত। অথচ সরকার তাদের প্রতি উদাসীন।

সরকারের উচিত, NTRCA’র অসাধু কর্মকর্তাদের পক্ষ না নিয়ে অনশনরত সনদধারীদের দ্রুত প্যানেলভিত্তিক নিয়োগদান করা। তা না হলে, অনশনকারীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়বে। তখন সরকার মহাবিপাকে পড়বেন। অনশনকারী প্রায় ত্রিশ হাজার তালিকাভুক্ত হয়েছে। তাদের অনশন ও নেতৃত্বদানে একটিই লক্ষ্য, বৈধভাবে নিয়োগলাভ। তারা সুশিক্ষিত, সচেতন ও যোগ্য নাগরিক; তাই তাদের আন্দোলনের ধরণ উন্নত। কিন্তু দীর্ঘ ৫মাসে ফলাফল শুন্য। এখন তারা বাধ্য হবেন, অনশনকে বিস্ফোরণে রূপ দিতে। বড় আকারে কমিটি করে নিয়োগপ্রত্যাশী তালিকাভুক্ত ৩০হাজার সনদধারী প্রত্যেকে ২/৩জনকে অনশনে উপস্থিতি নিশ্চিত করলে, লক্ষাধিক জনতার সমাবেশ ঘটবে। তাতে শাহবাগের পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। সরকারও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হবেন। কারণ, অনশনকারীদের পরিবারের সদস্যরাই সরকারের প্রশাসনে নিয়োজিত। তখন সরকার দাবি মানতে বাধ্য হবেন।

উল্লেখ্য যে, বর্তমানে প্রায় ৯০(নব্বই) হাজার শিক্ষকপদ খালি আছে। সরকার ইচ্ছে করলে, অন্তত অনশনরত ৩০হাজার শিক্ষককে নিয়োগ দিতে পারেন। এতে আসন্ন নির্বাচনে সরকারের জন্যও ইতিবাচক হবে। তা না হলে, বিরোধী রাজনৈতিক মহল ফায়দা নিতে পারেন; যা সরকারের জন্য মহাদুর্গতির কারণ হবে।

অতএব মানবতার মা স্বীকৃত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের কাছে আবেদন, দীর্ঘদিন যাবৎ অনশনরত নিয়োগপ্রত্যাশী সনদধারীদের দুর্দশা দুর করে NTRCA’র দুর্নীতি তদন্তপূর্বক উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *