ঝালকাঠি প্রতিনিধি:ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার বিকপাশা গ্রামের সাইদুর রহমান জন্ম থেকেই একটি তিল্ক দেখা যায় তার ডান গালে। সাইদুলের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার সেই তিল্কও বড় হতে থাকে। বর্তমানে তিল্ক এতোটাই বড় হয়েছে যার ফলে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে তার বয়স ৩৬ বছর। তিনি ২ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। শিশু পুত্র সন্তান দুটিও পিতার রোগেই আক্রান্ত হচ্ছে।
সাইদুর রহমান জানান, ছোট বেলায় ডান গালে (নাকের কাছে) একটি তিল্কের মতো দেখা যায়। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় আর সেটিও ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। বাড়ির পাশের একটি স্কুলে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়াশুনা অবস্থায় পিতা আঃ গনি হাওলাদার মারা যান। দরিদ্র পরিবারের অভাব-অনটনের সংসারে ৬ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় হওয়ায় পড়াশুনা ছেড়ে সংসারের হাল ধরতে হয়। তিনি ২ কন্যা ও ২ পুত্র সন্তানের জনক। সংসারের খরচ যোগানো এবং নিজের চিকিৎসার ব্যায় বহন করা একার পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে সেই তিল্ক বড় আকার ধারণ করে পুরো গাল ছেয়ে যায় এবং সেটি ভারী হতে থাকে। ৭বছর ধরে ভিতরে ব্যাথা থাকায় চুলকানোয় অস্বাভাবিক যন্ত্রণায় ভুগতেছি। টাকার অভাবে অনেক জায়গায় হোমিও চিকিৎসা করিয়েছি কিন্তু কোন সুফল আসেনি। বরিশাল শের-ই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখালে তিনি ঢাকা পিজি হাসপাতালে গিয়ে প্লাস্টিক সার্জারি করানোর কথা বলেন। সংসারের কথা চিন্তা করে টাকার অভাবে সেখানে আর যাওয়া হয়নি। কাঠমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত ভালোভাবে খেয়ে বাঁচাই কষ্ট হয়ে যায়। সামনে ঝুকে যখন কাজ করি তখন মুখ ভারী হয়ে যায়। অযু করতে গেলেও যদি নাড়া লাগে তাহলেই রক্ত ঝড়তে শুরু করে। কোন কিছু দিয়ে চেপে না ধরলেই রক্ত ঝড়তেই থাকে। ঠোটের পাশের স্থানে ঘাঁ হয়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, বড় ছেলে ওয়াজ কুরুনী পার্শবর্তি একটি নুরানী মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। জন্মের পর থেকে ওর কোমরের নীচে একটি তিল্ক ছিলো। তাও বড় হয়ে ডান পাশের পাছার অংশ থেকে হাটু পর্যন্ত ঝট আকারে ছেয়ে গেছে। ছোট ছেলে আব্দুল্লাহও একই মাদ্রাসায় পড়ে। ওর ডান গালের নীচের দিক থেকে একটি ঝট লক্ষ করছি বছর খানেক ধরে। তাও দিন দিন বড় হচ্ছে। সংসারে মা অসুস্থ্য, স্ত্রী, ৪ সন্তান ও ছোট ভাই আছে। তাদের নিয়ে সংসার পরিচালনা করায় আর নিজের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য হয়ে ওঠে না।
নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বাচ্চু জানান, বিকপাশা গ্রামের সাইদুর রহমান দরিদ্র পরিবারের সন্তান। যৌথ পরিবারে একাই একমাত্র আয়ের উৎস্য। সাইদুলে গালে বড় একটা কালো ঝটের মতো আছে। ওটার সু চিকিৎসা করানো দরকার। না হলে ওই রোগ থেকে ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা আছে। চিকিৎসা সহায়তার জন্য আমার কাছে আসলে যথাসাধ্য সহযোগিতা করা হবে।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মোঃ আবুয়াল হাসান জানান, এটা এক ধরনের চর্ম রোগ। এটাকে আমরা বলি অটোজম এন্ড ডমিনাল ডিসিস। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গোটা গোটা জাগতে পারে। এ রোগটির নাম নিউরো ফাইবারমেটিস। এটা ২ ধরনের হতে পারে। একটা চামড়ার বাইরে আরেকটা ভিতরে। ভিতরেরটায় ঝুকি বেশি, কিন্তু বাইরেরটাতে ঝুকি কম হলেও রোগ তো রোগই। এ রোগটির নাম যিনি আবিষ্কার করেছেন তিনি নাম দিয়েছেন ভন রেক্লিং হোসেন ডিসিস। এধরনের রোগীর ক্ষেত্রে প্লাস্টিক সার্জারি সর্বোত্তম পন্থা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *